কলকাতা: ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতিগত বৈষম্যের যে অভিযোগ এতদিন অহরহ শোনা যেত, এবার সেই জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগ বাংলায়। দু’টি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি। রয়েছে পিএইচডি ডিগ্রিও। কর্মসূত্রে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রারও। কিন্তু এমন পদে বসে থাকার পরেও জাতিবিদ্বেষের শিকার হতে হচ্ছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অমলকুমার ভূঁইঞাকে। এই অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উঁচু পদে বসে রয়েছেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের অভিযোগ, ‘দলিত’ বলে বার বার অপমানিত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসের সময় থেকেই যুক্ত অমলবাবু। আর রেজিস্ট্রার জয়ন্তবাবু কাজে যোগ দিয়েছেন বছর খানেক আগে। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের অভিযোগ, ‘নীচু জাত’ হওয়াটাই তাঁর অপরাধ হয়ে গিয়েছে। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে গঞ্জনা শুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রতিনিয়ত তিনি হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ ডেপুটি রেজিস্ট্রার। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে এসসি-এসটি আইনে অভিযোগ জানিয়েছেন অমলকুমার ভূঁইঞা। রাজ্যপালের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। আর এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ডেপুটি রেজিস্টার।
আজ হাইকোর্ট চত্বরে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলছেন, ‘কখনও কখনও আমাকে তুমি সম্বোধন করেন। ফাইল ছুড়ে ফেলে দেন। আমি কি সম্মান পাব না? আমাকে বলা হচ্ছে, সম্মান শুধু চাইলেই হবে না। কর্তৃপক্ষ সম্মান দেবে কি না, সেটাও ভাবতে হবে। এটাই কি আমার প্রাপ্য? আমাকে বলা হচ্ছে, আমি দলিত, আমি এসটি-এসটি। আমি ব্যবহার জানি না। ওনার কাছে আমি চক্ষুশূল, কারণ আমি নীচু জাত। কর্তৃপক্ষও নীরব, তাই এফআইআর করতে বাধ্য হয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীর সঙ্গেও। তাঁর বক্তব্য, তিনি কোনওদিন কাউকে জাতি তুলে অপমান করেননি। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এই নিয়ে বিশেষ করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রেজিস্ট্রার। তবে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের যাবতীয় অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলেই দাবি রেজিস্ট্রারের।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুশান্তকুমার চক্রবর্তী বলছেন, এই অভিযোগ খুব দুর্ভাগ্যজনক। এটি একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা। দু’জন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। আমাদের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী দিতে আমরা দেখব, কীভাবে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।’