কলকাতা: প্রচারে গিয়ে বুধবার নন্দীগ্রামে (Injured) আঘাত পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। কেননা আঘাত পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। দাবি করেন, চার-পাঁচজন নাকি তাঁর পায়ের উপর গাড়ির দরজা জোরে ঠেলে বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের বয়ান যদিও সেই দাবিকে সমর্থন করেনি। নবান্ন সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসন যে রিপোর্ট নবান্নে জমা দিয়েছে সেখানে ‘হামলার’ কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
পুলিশ রিপোর্টে গতকালের দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে লেখা হয়, গতকাল বিকেলে বিরুলিয়া বাজারের মন্দিরের ৪ টি সিড়ি ভেঙে ২০ ফুট হেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কনভয়ের দিকে এগিয়ে আসেন। নির্বিঘ্নেই গাড়িতে ওঠেন। রিয়াপাড়ার বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য তখন সবেমাত্র গাড়ি ছেড়েছে। কিছুটা গাড়ি এগিয়েছে। বিরুলিয়া বাজারে তখন মমতাকে দেখতে জনতার ঢল নামে।
যে রাস্তার উপর মমতার গাড়ি ছিল তা ১২ ফুটের মতো চওড়া। হঠাৎ করে জনতার ঢল রাস্তার দু’পাশে জড়ো হয়ে পড়ে। মানুষের ভীড় দেখে মুখ্যমন্ত্রীও গাড়ির দরজা খুলে হাত নাড়তে থাকেন। উৎসাহী জনতা গাড়ির দু’দিকে এগিয়ে আসে। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নামতে চেয়ে বাঁ পা মাটিতে রাখতে যান। মাথাও গাড়ির বাইরে বের করে ফেলেন।
যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি এগোচ্ছিল তার সামনে ৩০ ফুট দূরে একটা সিমেন্টের ৪ ফুটের খুঁটি পোতা ছিল। অন্ধকার ও মানুষের ভীড়ে তা দূর থেকে লক্ষ্য করা যায়নি। গাড়ি ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। রাস্তার দু’পাশে তখন মানুষের ঢল। কিন্তু, কনভয়ের সামনে থাকা জনতা ওই খুঁটিতে বাধা পেয়ে আটকে যায়, এগোতে পারেনি।
তখনই জনতার মধ্যে কয়েকজন কনভয়ের উপর পড়ে যায়। তখন কনভয়ের দরজা আচমকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ওই সময় যন্ত্রণায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘আ আ’ করে চিৎকার করার শব্দও শোনা যায়। স্থানীয় দোকানদাররাও সেটা শুনেছেন।
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর আদৌ হামলা হয়েছিল? নবান্নে প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশের
ইতিমধ্যেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নেমেছে জেলা পুলিশ। মূলত চারটি বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রথমত. দুর্ঘটনার সময় মুখ্যমন্ত্রীর চারপাশে পুলিশের সংখ্যা কম ছিল। কেন ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হল, মুখ্যমন্ত্রীর চারিদিকে সিভিক ভলেন্টিয়ার্স দিয়ে দড়ির কডন করা ছিল। জনতার ঢল মোকবিলা করার ক্ষেত্রে যা প্রয়োজনের থেকে ছিল কম। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন দড়ির কডন বেশি রাখা হয়নি!
যে খুঁটির উপস্থিতির কারণে এই দুর্ঘটনা, সেই খুঁটির আশেপাশে ওই সময় যারা ঠেলাঠেলি করছিল তাঁদের খোজা চলছে। পাশাপাশি, ইচ্ছাকৃতভাবে কারোর প্ররোচনায় এই ঘটনা ঘটল কি না সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আচমকা পড়ে গিয়ে কনভয়ের দরজা বন্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত পেয়েছেন কি না তা জোর দিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা তদন্ত করে দেখবেন বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাড়ি-গাড়ি কিচ্ছু নেই, নেই কোনও লাল দাগ, মমতার হাতে নগদ লাখ টাকারও কম