কলকাতা: রাজ্যে আগুনছোঁয়া ছিল পেট্রোল-ডিজেলের দাম। যুযুধান প্রতিপক্ষ ব্যস্ত ছিল রাজনৈতিক তরজায়। মাঝে পড়ে পিষেছে আমজনতা। কেন বাড়ল জ্বালানির দাম? কীভাবে মুক্তি? উত্তর আগে বাতলে দিয়েছিলেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাতরাতি এক লাফে অনেকটাই পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায়, এবার ফেসবুকে পোস্ট করলেন দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ লিখলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল, ডিজেলের এক্সাইজ় ডিউটি কমানোর ফলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম কমল ৫ টাকা এবং লিটার প্রতি ডিজেলের দাম কমল ১০ টাকা। এবার নিজেদের জনদরদী বলে দাবি করা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের স্বার্থে ভ্যাট কম করা।”
রাজ্যের শাসকলদলের অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এর জন্য দায়ী। তবে এই তত্ত্ব খারিজ করে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ দিলেন অন্য যুক্তি। তিনি বললেন, “পেট্রোলের দাম কি আজকে বেড়েছে নাকি? মনমোহন সিংয়ের আমল থেকে বেড়েছে। তাঁর যে ১০ বছরের রাজত্বকাল, তখন ৪০ শতাংশ বেড়েছে। মোদির রাজত্বকালে ২৭ শতাংশ বেড়েছে। আজ তো নয় বেড়েই যাচ্ছে। নতুন কিছু না।”
তিনি বলেছিলেন, “পেট্রোপণ্যের দাম কমাতে হলে তাকে জিএসটির আওতায় আনতে হবে। তবে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমার সম্ভাবনা থাকবে।” বিজেপি নেতৃত্বের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, পেট্রোপণ্যকে যাতে জিএসটি-র আওতায় আনা হয়। এদিকে, শাসকদল পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রাজ্যে একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ আন্দোলন করেছে। এটাই হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক হাতিয়ার। কিন্তু বুধবার রাতেই অর্থমন্ত্রকের তরফে বড় ঘোষণা। ভারত সরকার ডিজেল এবং পেট্রোলের উপর আবগারি শুল্ক অনেকটাই কম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেই কেন্দ্রের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রক।
বিষয়টিতকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি টুইটারে লিখেছেন, “পেট্রোলের উপর আরোপিত আবগারি শুল্ক ৫ টাকা এবং ডিজেলের উপর ১০ টাকা কমানোর যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে তাকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।” তার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টুইটে উদ্ধৃত করে তিনি লেখেন, ‘দিওয়ালিতে দেশকে উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী।’ তার পর যোগ করেন, এবার রাজ্য সরকারের তাদের শুল্ক কমিয়ে পেট্রোপণ্যের দাম আরও কমিয়ে আনা।
I heartily welcome the decision taken by the Govt of India to reduce the excise duty levied on petrol by Rs. 5 & diesel by Rs. 10.
Diwali gift to the nation by Hon’ble PM Shri @narendramodi ji.
Now the WB Govt should follow suit & slash State Tax to further bring down the rates.— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) November 3, 2021
কলকাতায় আজ পেট্রোলের দাম ১০৪. ৬৭ টাকা আর ডিজেলের দাম ৮৯.৭৯ টাকা। কলকাতায় পেট্রোলের দাম কমেছে ৬ টাকা ও ডিজেলের দাম কমেছে ১২ টাকা। একটানা উর্ধ্বমুখী দামের পর দেশবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে কেন্দ্র। এক ধাক্কায় অনেকটাই দাম কমান হয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের।
পেট্রোপণ্যের ওপর আফগারি শুক্ল হ্রাস করা হয়েছে। ডিজেলের ওপর আফগারি শুক্ল হ্রাস পেট্রোলের তুলনায় দ্বিগুণ হবে। পেট্রোল ও ডিজেলের টানা মূল্যবৃদ্ধিতে মুদ্রাস্ফীতিতেও প্রভাব পড়েছে। তার জেরে এই সিদ্ধান্ত।
দিওয়ালির আগে রেকর্ড গতিতে দৌড়চ্ছিল জ্বালানির দাম। দেশের অন্তত ১২টি রাজ্যে ডিজেল অতিক্রম করে গিয়েছিল ১০০ টাকা। পেট্রল ১০০ টাকা পেরিয়েছিল দেশের সব রাজ্যের রাজধানীতেই। আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছিল ব্যারেল প্রতি জ্বালানির দাম। কেন দাম চড়ছে জ্বালানির? বিশেষজ্ঞদের মত দিয়েছিলেন, বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের চাহিদা বাড়ছে। তার জেরেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাগামহীন। প্রতিদিনই প্রায় ৩০-৩৫ পয়সা করে বাড়ছিল পেট্রোপণ্যের দাম।
যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছিল, তাতে রোজই চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ভারত বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল আমদানি করা দেশ। ভারতের তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশই আমদানি করা হয় মধ্য-পূর্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি থেকে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েল অর্থাৎ অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে চলেছে। ফলে তার প্রভাব পড়ছিল ভারতের জ্বালানি তেলের মূল্যের উপরেও।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘বাংলার অবস্থা চিনের মতো হয়ে যাবে’, উপনির্বাচনে ৪ গোল খেয়ে হারের ব্যাখ্যা দিলেন দিলীপ