লেকটাউন: বুর্জ খলিফা দেখতে যেতে হবে না দুবাই, এবার কলকাতার উপকণ্ঠেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বের সব থেকে উঁচু ইমারত। সৌজন্যে লেকটাউন শ্রীভূমি স্পোর্টিং। নেপথ্যে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বোস।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতার বড় পুজোগুলোর মধ্যে নজর কেড়েছে লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং। অতীতে ১৮৮ ক্যানাল স্ট্রিটের শ্রীভূমি কখনও উপহার দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ, কখনও আবার তাক লাগিয়েছে দক্ষিণী ছবি বাহুবলীর সেটে। কলকাতায় লেকটাউন শ্রীভূমিই একমাত্র পুজো, যাদের উদ্বোধন হয় মহালয়ার দিনই। যার অর্থ, পুজো এখানে ৪ দিনের নয়, প্রায় সপ্তাহ দুয়েকের।
সুজিত বোসের পুজোর এক্স ফ্যাক্টর শুধু মণ্ডপ সজ্জাই নয়। এখানে দেবী প্রতিমার অলঙ্কারেও থাকে চমক। এবারও সাবেকি প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় থাকছে সেনকোর বিশেষ স্বর্ণালঙ্কার। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও শ্রীভূমির প্রতিমা গড়েছেন শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পাল। মণ্ডপ সজ্জায় ‘বিশ্বকর্মা’ রোমিও হাজরাই।
২০১৮ সালের বিজয়া সম্মিলনী। ওই অনুষ্ঠানেই সুজিত বোসের সঙ্গে আলোচনা, তারপরই ঠিক হয় বুর্জ খলিফা বানাবে শ্রীভূমি স্পোর্টিং। তবে করোনা ও লকডাউনের মতো অনাহুত প্রতিবন্ধকতায় গত বছর তা করা যায়নি। কিন্তু এবার মন্ত্রী সুজিত বোসের ইচ্ছেতেই তৈরি হচ্ছে বুর্জ খলিফা।
আরব আমির শাহির দুবাই শহরে বিশ্বের সব থেকে উঁচু ইমারতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল ২০০৪ সালে। ৩০ হাজার ঘর, ৯টা বিলাস বহুল হোটেল, ৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে পার্কল্যান্ড সহ ১২ হেক্টর অঞ্চল জুড়ে লেক তৈরিতে সময় লেগেছিল ৫ বছররেও বেশি। খরচ হয়েছিল দেড় বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় কম করে হলেও ৯ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
কলকাতায় বুর্জ খলিফার আদলে মণ্ডপ তৈরিতে সময় লাগছে ৩ মাস। ৭৫ জন কারিগর মিলে তৈরি করছেন এবারের ‘আশ্চর্য’। তদারকিতে হাজরা ব্রাদার্স। মূলত রোমিও সঙ্গে তাঁর ভাই সন্দীপ।
মণ্ডপ সজ্জার আগে মিনিয়েচার তৈরি করেছেন শিল্পী। যার রেপ্লিকাই থাকবে শ্রীভূমির পুজা প্রাঙ্গনে। উচ্চতা ১৪০ ফুট। অ্যালুমনিয়াম শিট, প্লাই দিয়ে তৈর হচ্ছে মণ্ডপ। থাকছে ৯×৯ ব্যাসার্ধের গোলাকার ঝারবাতি।
‘পারফেকশনিস্ট’ মন্ত্রী ভীষণই খুত খুতে। তাই কোনও রকম ফাঁকফোঁকর যেন না থাকে সেকারণে দুবাই গিয়ে চর্মচোক্ষে বুর্জ খলিফা দেখে এসেছেন রোমিও। তাঁর কথায়, “সুজিত দাই মূলত এই ভাবনার পিছনে। ২০১৮ সালের বিজয়া সম্মেলনী তে বসে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কীরে এবার কী করবি ভাবছিস। আমি বলেছিলাম ভাবতে হবে। সুজিত দা বলল, বুর্জ খলিফা বানালে কেমন হয়।” তারপর ২ বছরের অপেক্ষা, শেষ পর্যন্ত কলকাতায় বুর্জ খলিফা পাচ্ছে।
মন্ত্রীমশাই ‘কনফিডেন্ট’ তাঁর এবারের পুজো ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট’ হবেই। ঘনিষ্ঠ মহলে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মন্ত্রী বলছেন, আটলান্টিক গেট, দুবাইয়ের ফ্লেভার, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, সেনকোর স্বর্ণালঙ্কার, প্রদীপের প্রতিমা — কলকাতার সব থেকে বড় পুজো এবার লেকটাউনেই।