AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

আঁধারে পুজো: বই পাড়ার ফুটপাথে শুয়ে এ কটা দিন ওঁরা ‘আলপনা’ আঁকে মশারির উপর

durga pujo 2021: আমফানে কলেজ স্কোয়ারের ভেতরে জায়গা পেয়েছিলেন থাকার। কিন্তু মানুষ বেশি হওয়ায় স্থান সংকুলান হয়নি। কিছুজনের ফের জায়গা হয় ফুটপাতে। স্বামীর ভ্যান চালিয়ে বর্তমানে রোজগার একশো দেড়শো টাকা। সংসার চলছে কোনও মতে। ফলে ঘর ভাড়া করে থাকার সাধ্য নেই।

আঁধারে পুজো: বই পাড়ার ফুটপাথে শুয়ে এ কটা দিন ওঁরা 'আলপনা' আঁকে মশারির উপর
| Updated on: Oct 15, 2021 | 7:06 PM
Share

শুভেন্দু দেবনাথ: চারদিকে আলোর রোশনাই, কাতারে কাতারে মানুষের লাইন। নতুন জামা কাপড়ে সজ্জিত মানুষের ঢল সামাল দিতে পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ারে ছয়লাপ। পুজোর চারদিন এই চেনা ছবিটা দেখা কলেজ স্কোয়ারের। কিন্তু এত আলোও দূর করতে পারেনি ওদের জীবনের অন্ধকার। পুজোর রাতগুলোতেও কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজের উল্টোদিকের ফুটপাতে দেখা ওদের শোয়ার তোড়জোর করতে। রাত বাড়বে মানুষের ঢল তত বাড়বে, কিন্তু এসবে ওদের হেলদোল নেই। ফুটপাতেই মশারি টাঙিয়ে মানুষের কোলাহলের ভেতরে ওরা ঢলে পড়বে ঘুমে। ওরা মানে আলপনা দাসের পরিবার।

ক্যানিংয়ের হিজগড়ি গ্রামের বাসিন্দা আলপনার বাবা মা একদিন সব ছেড়ে কাজের আশায় পাড়ি জমান কলকাতায়। প্রথম প্রথম ধাপায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন আলপনার বাবা মা। পরিস্থিতির চাপে সেখান থেকেও উঠে যেতে হয় তাঁদের। তারপর থেকেই কলেজস্ট্রিটের ওই চত্বরে তাদের বাস। আলপনার জন্মও কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতে। বিয়ের পর তারা ফের ফিরে যান ক্যানিংয়ের খালপাড়ে। কিন্তু খাল সংস্কারের জন্য তাদের উঠে যেতে হয় সেখান থেকে। এরপর পার্টির লোকের হাতে পায়ে ধরে কম টাকায় এক টুকরো থাকার জায়গা পান তারা।

গত বছর লকডাউনে ক্যানিংয়েই ফিরে গিয়েছিলেন সরকারি ১০০ দিনের এবং লোকের বাড়ি কাজ করা আলপনা। কিন্তু ফোন আসে যদি কাজে যোগ না দাও তাহলে ১০০ দিনের কাজ চলে যেতে পারে। অগত্যা কাজে ফিরতেই প্রায় ১৫ ১৬ জন মেয়ে মিলে আবারও কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথবাসী হন তারা। আলপনার স্বামী কলেজ স্ট্রিটে ভ্যান চালান। কিন্তু লকডাউনে সে কাজও নেই। অগত্যা ২৬ বছর ধরে যে বাড়িতে কাজ করেন সেখানে ফোন করেন তিনি। কিন্তু কাজ জোটে না তাঁর। এমনকী তিনি এও বলেন হাফ মাইনেতে কাজ করার কথা বললেও জবাব আসে, আমাদেরই মাথায় হাত রাখার কেউ নেই, তোমাদের দেখব কী করে।

আমফানে কলেজ স্কোয়ারের ভেতরে জায়গা পেয়েছিলেন থাকার। কিন্তু মানুষ বেশি হওয়ায় স্থান সংকুলান হয়নি। কিছুজনের ফের জায়গা হয় ফুটপাতে। স্বামীর ভ্যান চালিয়ে বর্তমানে রোজগার একশো দেড়শো টাকা। সংসার চলছে কোনও মতে। ফলে ঘর ভাড়া করে থাকার সাধ্য নেই। ফলে পুরো পরিবার নিয়ে এখন তারা রাস্তাতেই সংসার পেতেছেন। পুজোয় কাররই জামা কাপড় হয়নি। তাদের ছোট ছোট শিশুরা হাঁ করে দেখছে তাদেরই বয়সী অন্যরা নতুন জামা কাপড়ে সেজে বাবা মায়ের হাত ধরে চলেছে দেবী দুর্গার দর্শনে। হাতে বেলুন, কিংবা অন্য খেলনা। আর তারা রাস্তাতেই গড়াগড়ি খেয়ে মেতেছে খেলায়। তাদের পুজোও নেই, নেই পুজোর আনন্দও। আলোর পুজোয় তারা রয়ে যায় অন্ধকারেই। নানা থিমের মণ্ডপের আলো এসে পড়ে তাদের গায়ে, কিন্তু তাদের জীবনে সে আলোর রেশ এসে পড়ে না।

আরও পড়ুন: আঁধারে পুজো: ধারের নাম, ভাগের সংসার! ফুটব্রিজের নীচে দুই সন্তান নিয়ে ‘উমার’ সতীন ঘর