আঁধারে পুজো: ‘দেখলেই কেটলি কেড়ে নেব’,ম্যাডক্সে চা বিক্রি করতে গিয়ে তটস্থ নন্দীগ্রামের চাওয়ালা
durga puja 2021: সরকার থেকে তো নানা ভাতা দিচ্ছে এখন, লকডাউনেও অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সরকার থেকে। পাননি সেসব! প্রশ্ন করতেই একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন গৌতমবাবু। কোনও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না সরকার থেকে। বেকার ভাতা, যুবশ্রী এসব সম্পর্কে আমাদের কিছু জানানোই হয়নি। পঞ্চায়েত সদস্যকে প্রশ্ন করলে উত্তর আসে আমরা জানি না।
শুভেন্দু দেবনাথ: ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। ম্যাডক্স স্কোয়ারের গেটের চারদিক ভয়ে ভয়ে দেখে নেয় লোকটি একবার। তারপর ধীরে ধীরে হাতের উনোন সহ কেটলি আর চা কফির গ্লাসে ভরা বালতিটা নিয়ে ম্যাডক্স স্কোয়ারের মাঠে ঢোকে সে। আবারও দেখে নেয় চারপাশ, আশেপাশে পুলিশ নেই তো। একজন চাওয়ালা পুজোয় চা বিক্রি করবেন তাতে এত ভয়ের কী আছে। কৌতুহলী হয়ে পাকড়াও করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন নন্দীগ্রাম ২ এর খোদামবাড়ি এলাকার ২ নম্বর রেয়াপাড়া ব্লকের রঙ্কিনীপুর গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মাইতি। পেশায় রাজমিস্ত্রী গৌতমের কাজ গিয়েছে লকডাউনে। এলাকার অনেকের সঙ্গেই নন্দীগ্রাম থেকে এসেছেন কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের মাঠে চা বেচে দুটো পয়সা রোজগারের আশায়। পুজোর কটাদিন জনা পাঁচজন মিলে তাঁরা ঘর ভাড়া করে থাকেন গড়চায়।
সরকার থেকে তো নানা ভাতা দিচ্ছে এখন, লকডাউনেও অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সরকার থেকে। পাননি সেসব! প্রশ্ন করতেই একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন গৌতমবাবু। কোনও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না সরকার থেকে। বেকার ভাতা, যুবশ্রী এসব সম্পর্কে আমাদের কিছু জানানোই হয়নি। পঞ্চায়েত সদস্যকে প্রশ্ন করলে উত্তর আসে আমরা জানি না। পঞ্চায়ের প্রধানেরও বক্তব্য এসব কিছু চলছে না। অভাবের তাড়নায় ভাই গেছেন গুজরাটে মিষ্টির দোকানে কাজ করতে।
সুযোগ পেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান গৌতমবাবু। ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন কিন্তু আর্থিক অবস্থা তথৈবচ। সুযোগ পেলে দিদিকে জানাতে চান যে কোনও ধরনের কাজের ব্যবস্থা যাতে হয়। তিনি যে কোনও কাজ করতে রাজি। কথা বলতে বলতেই এক সিভিক ভলান্টিয়ার এসে শাসিয়ে যান, ‘এখুনি বেড়িয়ে যাও নইলে চায়ের কেটলি কেড়ে নেব।’
অগত্যা ম্যাডক্স স্কোয়ারের বাইরেই কথা বলা। পুজোয় বাড়ির লোককে জামা প্যান্ট কিনে দিতে পারেননি। বন্যায় ভেসে গেছে সব। গ্রামেও নেই কাজের সুযোগ সুবিধা। প্রতি বছরই পুজোর সময় কিছু বাড়তি রোজগারের আশায় চলে আসেন কলকাতার পুজোয়। তার কথায় গত পাঁচ বছর ধরে আসছি। কিন্তু এবার যেন আকাল লেগেছে চা বিক্রিতে। মাঠে ঠিক মতো ঢুকতে পারছেন না। আর মাঠের বাইরে চায়ের দোকান রয়েছে। যেহেতু মাঠে ঠাকুর দেখতে আসা মানুষকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না অন্যান্য বারের মতো তাই ভাঁটা পড়েছে তাদের বিক্রিতেও। বেশিরভাগ লোকেই মাঠের বাইরের দোকান থেকে কিনছেন চা। ফলে ভাঁটা পড়েছে তাদের বিক্রিতে। জানেন না কী করে সংসার চলবে। গরচায় বাড়ি ভাড়াই বা দেবেন কী করে। তবু আশা যদি দিদ তাদের কথা শোনেন, যদি কিছু ব্যবস্থা হয়। কথা বলতে বলতে ম্যাডক্স স্কোয়ারের আলো এসে পড়ে তাঁর মুখে, কিন্তু তাতে আঁধার কাটে না তাঁর জীবনের। চারপাশের আলো ঝলমলে নতুন পোশাকের মানুষের ভিড়। সেসব ছুঁয়ে যায় না তাঁদের মতো ম্যাডক্স স্কোয়ের চা বিক্রেতাদের। তাদের মুখে এসে পড়ে না পুজোর আলো। মণ্ডপের পেছনের আঁধারের মতোই তাদের জীবনেও ভরা একরাশ অন্ধকার।
আরও পড়ুন: আঁধারে পুজো: বই পাড়ার ফুটপাথে শুয়ে এ কটা দিন ওঁরা ‘আলপনা’ আঁকে মশারির উপর