কলকাতা: মঙ্গলবার সকালে রেশন দুর্নীতির তদন্তে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় হানা দিয়েছে ইডি। বসিরহাটে আব্দুল বারিক বিশ্বাসের বাড়িতে হানা দেওয়ার পাশাপাশি তল্লাশি চালায় তাঁর কারখানা ও নিউটাউনের ফ্ল্যাটে। কে এই আব্দুল বারিক বিশ্বাস?
উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত লাগোয়া বসিরহাট এলাকা বেশ দাপুটে নাম আব্দুল বারিক বিশ্বাস। প্রথম জীবন থেকেই সীমান্তে বেআইনিভাবে বিভিন্ন পণ্য পারাপার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ। এমনও অভিযোগ, পরবর্তীকালে গরু পাচার চক্রের মাথা হয়ে ওঠেন তিনি।
মুর্শিদাবাদের এনামূল হক জেরায় স্বীকার করেছেন, বারিকের হাত ধরেই গরু পাচার শুরু করেন বারিক। গরুর সঙ্গে সোনা পাচারেও হাত পাকানোর অভিযোগ রয়েছে বারিকের নামে। প্রতি ১০ গ্রাম সোনা বাংলাদেশ থেকে সীমান্তের এই পারে এনে দিলেই মুনাফা ৪ হাজার টাকা!
২০১৪ সাল। বসিরহাট থেকে কলকাতাগামী গাড়ি একটি গাড়ি পাকড়াও করে ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স। গাড়ি থেকে ৪২ কিলো ওজনের প্রায় ১৫ কোটির পাচারের সোনা উদ্ধার করা হয়। আর সেই গাড়িতেই ছিলেন বারিক।
ততদিনে বারিকের ভাই গোলাম সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে। জেলা পরিষদের সদস্য। সেই সময় গোলাম দাবি করেন ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ। তাঁরা আলাদা থাকেন। সে সময় জেলার নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও দাবি করেছিলেন, দুই ভাইয়ের সম্পর্ক খারাপ। শুধু তাই নয়, বারিক মাফিয়া, গোলামকে খুনের চেষ্টাও করেছেন বলে দাবি করেছিলেন বালু। অথচ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা রাজনীতিতে বারিক আবার বালু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
সোনা পাচার মামলায় ইডি গ্রেফতার করেছিল বারিককে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। ২০১৫ সালে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইডি। অন্যদিকে সেই সময় সারদা চিটফান্ড মামলায় বারিকের নাম উঠে আসে। বারিকের মাধ্যমে চিটফান্ডের টাকা পাচার হয়েছে বলে ইঙ্গিত মেলে। ওই সময় বারিক জামিন পাওয়ার পর দীর্ঘদিন লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যান।
এরপরই ধীরে ধীরে রাইস মিল থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করেন বারিক। আগাগোড়া জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বারিককে মদত দেন বলে অভিযোগ। ২০২১ সালে ফের বারিকের নাম উঠে আসে সিবিআইয়ের হাত ধরে। গরুপাচার মামলার তদন্তে উঠে আসে বারিকের নাম। এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরের বছর ২০২২ সালে রাজ্য পুলিশের সিআইডি আচমকাই কয়লা পাচার মামলায় বারিককে গ্রেফতার করে। সিআইডি জানায়, আসানসোল শিল্পাচলে বারিকের স্পঞ্জ কারখানা আছে। সেই কারখানার আড়ালে ইসিএলের বন্ধ এবং পরিত্যক্ত কয়লা খনি থেকে বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলনের অভিযোগ ওঠে।
সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর কলকাতার নারায়ণপুর এলাকার ফ্ল্যাটেই বেশি থাকতেন বারিক। তাঁর দাবি, রাইস মিলের ব্যবসা ছাড়া এখন তাঁর কোনও ব্যবসা নেই।
বারিক বিশ্বাসের দাদা গোলাম উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে গোলামের স্ত্রী নির্বাচনে জেলা পরিষদের টিকিট পান। গোলামের স্ত্রী সাফিজা বেগম এখনও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য।
বারিক বিশ্বাস সোনা পাচারে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিন পেয়ে রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে ইটভাটা এবং অ্যাগ্রো প্রোডাক্টের ব্যবসা শুরু করেন। কলকাতা, নিউটাউন , রাজারহাট, বসিরহাট এলাকায় প্রচুর সম্পত্তিও কেনা হয়েছে। ওই কোম্পানিরগুলির আড়ালেই বারিক বেআইনি পাচার ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। রেশন দুর্নীতির টাকাও এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে বিনিয়োগ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে ইডি।