Bratya Basu: মার্ক্সের নামে গণহত্যা করলে তার দায় মার্ক্সের নয়: ব্রাত্য
Bratya Basu: এদিন রবীন্দ্রসদনের একতারা মুক্তমঞ্চে শারদ বই পার্বণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে ব্রাত্য বলেন, ইন্টারনেট আবিস্কারের থেকে গুটেনবার্গের ছাপাখানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তা না হলে বইয়ের উদ্ভব, প্রকাশ, প্রচার এত সহজে হত না। ব্রাত্যর দাবি, বেশি বিক্রি মানেই ভাল বই এমনটা ভাবা ঠিক নয়।

কলকাতা: কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী) তথা সিপিআইএমের সঙ্গে তাঁর দলের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ঝাঁঝালো আন্দোলনের হাত ধরে তাঁর দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হটিয়েছেন সেই সিপিএমকে। তিনি এখন দলের প্রথমসারির নেতা, মমতা মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার পরেও তাঁর মুখে শোনা গেল মার্ক্সস্তুতি। ‘মার্ক্সের নামে কেউ গণহত্যা করলে মার্ক্সের লেখার মাহাত্ম্য তাতে কমে না’, শারদ বই পার্বণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এ কথাই বললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তবে তাঁর মুখে একবারও শোনা যায়নি সিপিআইএমের নাম। এখানেই ঘোলা হচ্ছে জল। তবে কী এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ঘুরপথে আদর্শগত দিক থেকে সিপিএমকে খোঁচা দিতে চাইলেন ব্রাত্য? মুখে মার্ক্সের নাম করলেও আদপে আদর্শিক অন্তঃসারশূন্যতার দিকটাই তুলে ধরতে চাইলেন? রাজনৈতিক মহলে উঠছে প্রশ্ন।
এদিন রবীন্দ্রসদনের একতারা মুক্তমঞ্চে শারদ বই পার্বণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে ব্রাত্য বলেন, ইন্টারনেট আবিস্কারের থেকে গুটেনবার্গের ছাপাখানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তা না হলে বইয়ের উদ্ভব, প্রকাশ, প্রচার এত সহজে হত না। ব্রাত্যর দাবি, বেশি বিক্রি মানেই ভাল বই এমনটা ভাবা ঠিক নয়। সোজা কথায়, পরিমাণের থেকে গুণমানই অগ্রগণ্য। তিনি বলেন, “যে বই বেশি বিক্রি হয় তার গুণগত মান যে ভাল তা বলা উচিত হবে না। বই প্রেমী মানুষ সংখ্যালঘু। সেই মানুষই সংখ্যাগুরুকে নিয়ন্ত্রণ করে।”
এরপরই সোজা মার্ক্সের প্রসঙ্গে চলে গিয়ে তিনি বলেন, “মার্ক্সের নামে কেউ গণহত্যা করলে মার্ক্সের লেখার মাহাত্ম্য তাতে কমে না। নীৎসের লেখার মাহাত্ম্যও তাতে কমে না। এরা মূলত দার্শনিক ছিলেন। এরা অর্থনীতিবিদ, মূলত চিন্তক ছিলেন। যদি কোনও রাজনীতিবিদ মার্ক্সের নাম নিয়ে বা নিরসের নাম নিয়ে যদি গণহত্ম্যা চালান, সে তো মার্ক্সের দায় হতে পারে না।”
প্রসঙ্গত, বিজনসেতু, সাঁইবাড়ি থেকে মরিচঝাঁপি, একাধিক গণহত্যার ঘটনায় বারবার সিপিএমকে কাঠগড়ায় তোলেন তৃণমূল নেতারা। নানা মিটিং-মিছিলে বারবারই ওঠে সেই প্রসঙ্গ। লাগাতার তোপ শোনা যায় মমতার মুখে। যদিও ব্রাত্যর যুক্তি, “কেউ কেউ নীৎসের নাম নিয়ে খুন করেন। কেউ কেউ মার্ক্সের নাম নিয়ে খুন করেন। তাতে নীৎসে বা মার্ক্সের গৌরব কমে না। কিচ্ছু যায় আসে না। তাদের নাম নিয়ে কেউ যদি গণহত্যা করে থাকেন কিচ্ছু যায় আসে না। সে হিটলার হতে পারে বা স্তালিন হতে পারে, কিচ্ছু যায় আসে না।”
সাম্প্রতিককালে তাঁর ‘উইঙ্কেল টুইঙ্কেল’ নাটক থেকে ‘মহাপুরুষ ও কাপুরুষ’-এর মতো ছবি নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। যেখানে রাজনীতি থেকে সমাজনীতি, পরিবর্তনের গল্প, সব প্রসঙ্গই বারবার ফিরেফিরে এসেছে। বুদ্ধিজীবী মহলে প্রায়শই চর্চা উঠে আসে তাঁর লেখা, তাঁর অভিনয়ের প্রসঙ্গও। এবার তাঁর মুখে মার্ক্সস্তুতি শোনা যেতেই তা নিয়ে চর্চা শিল্পী মহল থেকে রাজনীতির পাড়াতেও।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী আবার খোঁচা দিয়ে বলছেন, “ব্রাত্য বসু কোথায় গিয়ে কী বলছেন তার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি না। মার্ক্সে নিয়ে এ কথা বলে, গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে উনি কাদের দিয়ে ইঙ্গিত করছেন আমি বুঝতে পারছি না। তিনি মাওবাদী বা জঙ্গলমহলের কারও কথা কী বলছেন? তাঁদের সঙ্গে তো আবার তৃণমূল কংগ্রেসের যোগসাজস পাওয়া গিয়েছিল। যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের মধ্যে লেনিন খুঁজে পান তাঁদের মধ্যে ব্রাত্যবাবু কী একজন? ওনার মার্ক্স নিয়ে না কথা বলাই ভাল।”
