Election Results 2021: আগুন ভাষণেই, ভোটবাক্সে ম্লান ভাইজানের ‘ক্যারিশ্মা’

May 02, 2021 | 11:22 PM

Election Results 2021: বেশ কয়েকটি কারণে আব্বাসের 'জাদু' কাজ করল না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

Election Results 2021: আগুন ভাষণেই, ভোটবাক্সে ম্লান ভাইজানের ক্যারিশ্মা
ফাইল চিত্র।

Follow Us

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা (West Bengal elections 2021) ভোটে বিজেপি যেমন তৃণমূলের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। একইরকমভাবে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি ও আব্বাস সিদ্দিকির জোড়াফলা নিয়ে কিছুটা হলেও ভাবিত ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। মমতাকে একাধিক প্রচারসভায় বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁর সংখ্যালঘু ভোট কাটতে হায়দরাবাদ থেকে বিজেপির এক বন্ধু এসেছেন। সঙ্গী হয়েছেন ফুরফুরা শরিফের এক ‘চ্যাংড়া ছেলে’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশও মনে করেছিলেন, এবার মমতার ভাগের সংখ্যালঘু ভোটে কিছুটা থাবা বসাবেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি ও সংখ্যালঘু নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তবে রবিবার সে সব অনুমান নিছক অনুমান হয়েই থেকে গেল। মমতার ভোটের ভাঁড়ে আঙুলও ছোঁয়াতে পারলেন না তাঁরা।

গত বিহার বিধানসভা ভোটে ‘ভোট কাটুয়া’ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন ২০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। জিতেছিলেন পাঁচটিতে। অধিকাংশ আসনই বাংলা ও বিহারের সীমানাবর্তী জেলা। বিহারে জয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল তাঁর। নিজেই জানিয়েছিলেন, বাংলাতেও খাতা খুলবেন। বাংলায় ভোটের আবহে এক সকালে ফুরফুরা শরিফে গিয়ে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। জল্পনা আরও জোরাল হয়, তবে কি সত্যিই বাংলায় খাতা খুলতে চাইছে এই দল?

আরও পড়ুন: ভোটে হারলেও করোনা আবহে মাঠেই থাকবেন ‘রেড ভলান্টিয়ার’ ঐশী ঘোষ

এরইমধ্যে জল অন্য ঢালে গড়াতে শুরু করে। বামেদের হাত ধরে ফেলেন আব্বাস। নিজের দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফের নাম ঘোষণা করে জানান ভোটে লড়বেন। বামেদের ব্রিগেডে সংযুক্ত মোর্চার জন্ম হয়। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ মোর্চার অংশী। এর পর থেকেই মনে হয়েছিল, এবার আব্বাসের হাত ধরেই বোধহয় হালে খানিক পানি পাবে বামেরা। রাজ্যের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের মধ্যেও থাবা বসাবে সংযুক্ত মোর্চা।

বামেদের ব্রিগেড মঞ্চে ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকি।

প্রচারে গিয়ে আব্বাস বারবার মমতা ও তাঁর সরকারের বিরোধিতায় সরব হন। এ রাজ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য সরকার কোনও কিছুই করেনি বলে দাবি করেন। সেই সঙ্গে আশ্বাস দেন, তাঁদের মোর্চা জিতলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন ধারা অন্য খাতে বইবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হয়ত ধরে নিয়েছিলেন, তাঁর ভোটাররা এবার ভাগ হতে পারে। প্রচারে গিয়ে সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে আইএসএফকে তাচ্ছিল্যও করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

বুথ ফেরত সমীক্ষায় সংযুক্ত মোর্চা যে কটা আসন পেয়েছিল, তার একটা অংশ কিন্তু আব্বাসকে মাথায় রেখেই ভেবেছিলেন বিশ্লেষকরা। রবিবার সে সব হিসাব কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। সংযুক্ত মোর্চার দখলে একমাত্র আসন ভাঙড়। জয়ী আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকি, আব্বাস সিদ্দিকির ভাই। কিন্তু কেন এমনটা হল? কেন সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে কাজ করল না ভাইজানের ‘ক্যারিশ্মা’?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম থেকেই বড্ড সাম্প্রদায়িক ভাবধারা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সিদ্দিকি। বাংলায় তা এখনও অবধি গ্রহণযোগ্য নয়। যে কারণে হিন্দুত্বের প্রচারক হিসাবে পরিচিত বিজেপির হিন্দু ভোটও খানিকটা নিজেদের ঘরে টেনে নিয়েছে তৃণমূল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিদ্দিকির কথায় ভরসা রাখার মত কোনও জোরাল কারণ ভোটাররা খুঁজে পাননি। অর্থাৎ, সিদ্দিকিকে ভোট দিলে আদৌ সংখ্যালঘুদের কোনও উপকার হবে কি না তার জবাব মেলেনি।

ফুরফুরা শরিফে আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ওয়েইসি।

সিদ্দিকিকে ভোট দিলেও বাংলায় যে সরকার গড়ার মত ক্ষমতা সংযুক্ত মোর্চার নেই, তাও সংখ্যালঘু ভোটাররা ভালই বুঝতে পেরেছিলেন। অর্থাৎ মমতার ভোট কেটে গেলে আখেরে বিজেপি যে লাভবান হবে তেমনটাই মনে করেছেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে এনআরসি নিয়ে চাপ থাকবে। সরকারে না থাকলে বিধানসভায় কয়েকটা আসন জিতে সংযুক্ত মোর্চা যে খুব একটা কিছু করতে পারবে না, তাও ধরে নিয়েছিলেন ভোটাররা। সেক্ষেত্রে মমতার সরকারকেই নিরাপদ মনে করেছেন তাঁরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, এসব সমীকরণই মমতার ঝুলিতে আরও একবার সংখ্যালঘু ভোট ভরে দিয়েছে। উল্টে সিদ্দিকিতে ভরসা রেখে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে সিপিএম-কংগ্রেসকে। যে কটা আসন ছিল, এবার তাও গেল।

Next Article