কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) গ্রেফতার অয়ন শীলকে (Ayan Sil) শনিবার আদালতে পেশ করা হয়েছিল। বিচারকের কাছে অয়নের জামিনের আবেদন জানান ইডির (Enforcement Directorate) আইনজীবী। যদিও ইডির তরফে সেই আবেদনের বিরোধিতা করে অয়নকে জেল হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী এদিন আদালতে বিস্ফোরক দাবি করেন অয়নের বিষয়ে। তিনি বলেন, ইডির অফিসারদের জেরায় অয়ন স্বীকার করেছেন তিনি একজন মিডলম্যানের মাধ্যমে এক প্রভাবশালীর কাছে ২৬ কোটি টাকা পাঠিয়েছিল। সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে ইডির আইনজীবীর মুখে উঠে আসে গরুপাচারের প্রসঙ্গও। বললেন, ‘আগে বোলপুর শিক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন বোলপুর চেনা যায় দুর্নীতি ও গরুপাচারের জন্য।’ উল্লেখ্য, এর আগে অয়ন শীলকে যখন আদালতে পেশ করা হয়েছিল, তখন ইডির তরফে দাবি করা হয়েছিল তারা নাকি সোনার খনি খুঁজে পেয়েছে।
এদিন আদালতে বিচারক অয়নের কাছে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চান। অয়ন জানান, তিনি বি.কম স্নাতক। বিচারক জিজ্ঞেস করেন, পেশা কী? অয়নের উত্তর, ব্যবসা। বিচারক জানতে চান কীসের ব্যবসা করেন অয়ন। উত্তরে অয়ন জানায়, হোটেলের ব্যবসা, আটি, বিল্ডিং ও ডেভেলপারের ব্যবসা। ২০০০ সাল থেকে সে ব্যবসা করছে বলেও দাবি করে। অয়নের শীলের আইনজীবী এদিন আদালতে তাঁর মক্কলের জামিনের আবেদন করার সময় বলেন, ‘ইডি বলছে, আমার মক্কেলের কাছে নাকি প্রচুর দুর্নীতির টাকা গিয়েছে। উনি ডিরেক্টর ছিলেন একটা সংস্থার। সেই সংস্থা টেন্ডার প্রক্রিয়াতে অংশ নেয়।’ বিচারক জানতে চান ওই সংস্থার কাজ কী ছিল।
জবাবে অয়নের আইনজীবী বলেন, ‘পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল টেন্ডারে। টেন্ডার অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।’ বিচারকের প্রশ্ন, ‘যদি এটা শুধু পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার হয়ে থাকে তাহলে তো ওএমআর মূল্যায়নের দায়িত্ব থাকে না। ওএমআর-এর মূল্যায়নের দায়িত্ব ছিল কি?’ আইনজীবীর বক্তব্য, হ্যাঁ ছিল। অয়নের আইনজীবী আরও বলেন, ‘এই ক’দিনে কোনও নতুন তথ্য সামনে আসেনি যার ভিত্তিতে অয়নকে জেল হেফাজতে পাঠানো যেতে পারে। আর্থিক লেনদেন খুঁজে বের করতে পারেনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আমার মক্কেল তো চাকরি দেওয়ার জায়গায় ছিল না। শুধু চাকরি প্রক্রিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তল্লাশি, জেরা সবই শেষ। তাই যে কোনও কঠোর শর্তে জামিন চাইছি। ইডি চাইলে আমার মক্কেলের পাসপোর্ট জমা রাখতে পারে।’
অন্যদিকে ইডির আইনজীবীর বক্তব্য, আমরা ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পেয়েছি অয়নের। তাতে ৮ কোটি টাকা রয়েছে। ৮টি ফ্ল্যাট, ৫টি গাড়ি, পেট্রোল পাম্প, ভাড়ার হোটেল রয়েছে অয়নের। এই স্ক্যাম এখন দুভাগে বিভক্ত। একটি এসএসসি, অন্য দিকে পুরসভা দুর্নীতি। যারা পরীক্ষায় পাশ করত সেই যোগ্য প্রার্থীকে অযোগ্য করা হত ওএমআর শিটে জালিয়াতি করে। যারা টাকা দিত তাদের ফাঁকা ওএমআর শিট নেওয়া হত। পরে সেটা নিজেরা অফিসে উত্তর বসিয়ে দিত। এসএসসি-র ক্ষেত্রে কুন্তল ছিল অয়ন ও পার্থর মাঝের ব্রিজ। এক হাজার চাকরি দিয়েছে এসএসসির বিভিন্ন পদে। ৪৫ কোটির লেনদেন হয়েছে। জামিন খারিজ করা হোক। জেলে গিয়ে জেরার অনুমতি চাইছি।’