‘মায়ের হাত ধরে সোনার কেল্লা দেখা…’, জয়ায় পুড়ল বহু স্মৃতি, আবার ফিরবে তো?
Jaya Cinema Fire: সিনেমা হলে আগুন লাগার নজির শহরে রয়েছে। কিন্তু সে সব ক্ষেত্রে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তৈরি হয়েছে শপিং মল কিংবা বার।
কলকাতা: ভয়াবহ আগুনে কার্যত ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে লেকটাউনের জয়া সিনেমা হল। ৬০-এর দশকে তৈরি এই সিনেমা হল ঘিরে রয়েছে অনেকের স্মৃতি। শহরের অনেক পুরনো সিনেমা হলই আজ মাল্টিপ্লেক্সের চেহারা নিয়েছে। আর এ ভাবেই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে শহরবাসীর ‘ছেলেবেলার’ স্মৃতি। সেই তালিকায় জুড়ল জয়ার নাম। চোখের সামনে জয়াকে দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখে আত্মীয় বিয়োগের যন্ত্রণা পেলেন অনেকেই। দর্শকদের বুকে যেন শুধুই শূন্যতা!
রাতের আগুনের খবরে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন পুরনো দর্শকরা। এলাকার বাসিন্দা, যাঁরা কিশোর বয়সে বহু সিনেমা দেখেছেন, জয়া সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। এলাকার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক বরুণ দেব ঘোষ এই হলের পুরনো দর্শক। স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানান, ১৯৭৪ সাল নাগাদ মায়ের হাত ধরে জয়া সিনেমা হলে জীবনের প্রথম সিনেমা দেখেছিলেন ‘সোনার কেল্লা’, তখন তাঁর বয়স বছর দশেক। তাই তাঁর কাছে জয়ার এই ক্ষতি আত্মীয় বিয়োগের সমান।
আর এক পুরনো দর্শক পেশায় চিকিৎসক অনুপ দত্তও ফিরে যান ছেলেবেলায়। মনে করে বলেন, ১৯৬৭ সালে বাবা-মায়ের হাত ধরে পাঁচ বছর বয়সে ধর্মেন্দ্র ও রাখি অভিনীত ‘জীবন-মৃত্যু’ দেখতে এসেছিলেন তিনি। এই সব পুরনো দর্শকেরা চান, জয় আবার পুরনো রূপেই ফিরে আসুক। অন্যন্য সিনেমা হলের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে, তা যেন না হয়, এই আশঙ্কাতেই ভুগছেন জয়া-প্রেমী দর্শকেরা। এর আগে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল ভবানীপুরের রূপালী, কালীঘাটের উজ্জ্বলা, ব্যারাকপুরের রথীন্দ্র সিনেমা হল। যেখানে রূপালী ছিল, সেখানেই আজ মাথা তুলেছে আইকোর প্লানেট, কালীঘাটের উজ্জ্বলার জায়গায় তৈরি হয়েছে কেয়া শেঠের মল আর রথীন্দ্র-র জায়গায় ‘সাকি বার’। জয়ার জায়গাতেও কি মাথা তুলবে এমনই কোনও ঝাঁ চকচকে নির্মাণ? সেই প্রশ্নই তুলছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: আপনার ‘দুয়ারে’ যাবে সিপিএমের চিঠি, উত্তর দেওয়া প্রাপকের ইচ্ছে
শুক্রবার রাতে ৯ টা ১৫ নাগাদ এই আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলেযায় দমকলের ১৫ টি ইঞ্জিন। সকালের মধ্যে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সিনেমা হলের চারতলায় এই আগুন লাগে। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন দলকলমন্ত্রী সুজিত বসু। জানা গিয়েছে সিনেমা হলের দারোয়ানের স্ত্রী রান্না করার সময় এই আগুন লাগে। ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মিনি জয়া হলটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। আজও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন সুজিত বসু, যাবেন জয়ার মালিকও।