বিশ্লেষণ: কোভ্যাক্সিন তৈরিতে বাছুরের প্লাজমা? আসল সত্যিটা জানুন
সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টে দাবি উঠছে কোভ্যাক্সিন তৈরি হয়েছে সদ্যজাত বাছুরের প্লাজমা দিয়ে।
নয়া দিল্লি: মারণ ভাইরাস সারা বিশ্বে হানা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই মোট করোনা (COVID 19) আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ কোটিরও বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ। করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ আপাতত বিশ্বের কাছে নেই। কয়েকটি পদ্ধতি ও করোনা প্রতিষেধকই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র। একাধিক দেশের মতো ভারতেও জোর কদমে চলছে টিকাকরণ। দেশে অনুমোদন পেয়েছে কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ও রাশিয়ার স্পুটনিক ভি প্রতিষেধক। ভাইরাসের পাশাপাশি দেশজুড়ে ছড়াচ্ছে টিকা নিয়ে একাধিক গুজব। তাই কড়া হাতে তা থামাতে বারবার বিবৃতি প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সম্প্রতি ‘ম্যাগনেট ম্যানের’ গুজব নস্যাৎ করেছে একাধিক বিজ্ঞান মঞ্চ। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টে দাবি উঠছে কোভ্যাক্সিন তৈরি হয়েছে সদ্যজাত বাছুরের প্লাজমা দিয়ে।
ঠিক কী দাবি উঠছে?
টুইট করে জাতীয় কংগ্রেসের নেতা গৌরব গান্ধী লিখেছেন, “মোদী সরকার আরটিআইর উত্তরে মেনে নিয়েছে কোভ্যাক্সিনে সদ্যজাত বাছুরের সেরাম থাকে। যা ২০ দিনের ছোট বাছুরে মেরে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে নেওয়া হয়। এটা জঘন্য। এই তথ্য় মানুষের সামনে আগে আনা উচিত ছিল।” টুইটে সেই আরটিআইর ছবিও পোস্ট করেছেন গৌরব। একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও দাবি একই।
কেন্দ্র কী জানিয়েছে?
কোভ্যাক্সিন টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার পর কেন্দ্র জানিয়েছে, হ্যাঁ কোভ্যাক্সিন তৈরিতে প্লাজমা প্রয়োজন হয়। কিন্তু তা কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকে থাকে না। কেন্দ্রের সাফ কথা, ভ্যাকসিনের অংশ নয় প্লাজমা। তবে কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতির জন্য এই উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই মহিষ ও অন্যান্য প্রাণীর সদ্যজাতদের দেহ থেকে এই প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়।
কী কাজে লাগে সদ্যজাত বাছুর বা মহিষের প্লাজমা?
কোভ্যাক্সিন একটি ইনঅ্যাক্টিভ প্রতিষেধক। অর্থাৎ ভ্যাকসিনে মৃত ভাইরাস থাকে। তাই প্রথমে ভাইরাসকে ভেরো সেলের ওপর প্রয়োগ করা হয়। এরপর ভেরো সেলকে ভ্যাকসিনে প্রবেশ করানো হয়। তার আগে জলে ধুয়ে ও অন্যান্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভেরো সেল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হয় প্লাজমাকে। ভাইরাসের আঘাতে ভেরোসেল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়। তারপর ভাইরাসকেও মেরে ফলে অর্থাৎ ইনঅ্যাক্টিভ করে ব্যবহার করা হয়। তার মানে ভ্যাকসিনে বাছুরের প্লাজমার কোনও নাম-গন্ধ থাকে না। তবু প্লাজমা প্রয়োজনীয়।
ভারত বায়োটেকের বিবৃতি কী?
কোভ্যাক্সিন নির্মাতা ভারত বায়োটেকও এ বিষয়ে তাদের মত জানিয়েছে। ভারত বায়োটেক জানিয়েছে, কোভ্যাক্সিন তৈরিতে ব্যবহার হয় সদ্যজাত বাছুরের সেরাম। কিন্তু তা কখনওই ভাইরাসের বৃদ্ধিতে কাজে লাগে না ও বোতল-বন্দি প্রতিষেধকেও থাকে না। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষেধকে একাধিকবার ফিল্টারের পর স্রেফ মৃত ভাইরাস প্রবেশ করানো হয়। সংস্থা জানিয়েছে, সারা বিশ্বেই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য মহিষ বা সদ্যজাত বাছুরের প্লাজমা ব্যবহার করা হয়। এ কথা একাধিকবার বিভিন্ন প্রকাশনায় ও কার্যকরিতার রিপোর্টে তারা জানিয়েছে বলে দাবি ভারত বায়োটেকের।
কী পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভ্যাক্সিন তৈরিতে ব্যবহার হয় বাছুরের প্লাজমা এ বিষয়ে কোনও বিভ্রান্তি নেই। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে সহমত হয়ে তাঁরা জানান, মূল ভ্যাকসিনের উপাদান হিসেবে থাকে না বাছুরের প্লাজমা। চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান, ভেরো সেলকে বড় করে তুলতে ব্যবহার হয় বাছুরের প্লাজমা। কিন্তু ভ্যাকসিনে থাকে না।
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ভেনেজুয়েলায় ১ টাকায় পেট্রল, ভারতে ১০২! নেপথ্যে কার কারসাজি?