কলকাতা: অনেক প্রতিবাদ, মামলা মোকদ্দমা, আইনি জটিলতা পেরিয়েছে সবুজ মঞ্চ। তবে এবার আর শব্দ ‘জব্দ’ নয়, এবার শব্দ ‘তাণ্ডব’ বাংলায়! সারা দেশে আগেই মিলেছিল ছাড়পত্র। এবার বাংলায় ৯০ ডেসিবেল থেকে বেড়ে ১২৫ ডেসিবেল হচ্ছে বাজির শব্দ। ফলে চকলেট, কালীপটকা কিংবা দোদমা আর এবার নিষিদ্ধ নয়। কালীপটকার দিন আবার শুরু হল। গত ১৭ অক্টোবর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানায় যে, বাজির শব্দসীমা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় সবুজ মঞ্চ নামক একটি সংস্থা। শুনানিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানায় যে সবুজ বাজি ছিল না সেই সময় শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল ছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে বাজারে সবুজ বাজি এসেছে। তারপরে সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইন মেনে শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে।
শব্দ বাজির ওপরে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এবার বাজারে এবার দেদার বিকোবে চকলেটের মতো নিষিদ্ধ বাজিও। এপ্রসঙ্গে বাজি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাবলা রায় বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে এতদিনে মান্যতা দেওয়া হল। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল সারা ভারতে কার্পেট হবে ১২৫ ডেসিবেল। সবুজ মঞ্চ সাত আট বার কেসে হেরেছে। তারপরেও আমরা বোঝাতে পারিনি।” তিনি জানান, মহেশতলা, চম্পাহাটিতে সবুজ বাজি তৈরি হচ্ছে। ১২৫ ডেসিবেল রেখেই আতসবাজি তৈরি হবে। পরিবেশবীদরা তো নিজেরাই ছোটবেলা থেকে ১৫০ ডেসিবেলের আতসবাজি শুনেছেন। এখন কি কানের ফুটো ছোটো হয়ে গিয়েছে? কলকাতার থেকে পণ্ডীচেরিতেও জনঘনত্ব অনেক বেশি। জনঘনত্বের বিচারে তো আমরা ১৩ নম্বরে।
যদিও পুলিশ কমিশনারের দাবি ‘নিরি’, ‘NEERI’ অনুমোদিত বাজি না হলে যে কোনও বাজিই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ধড়-পাকড়ও চলছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, “কালীপুজো, ছটপুজো, দীপাবলিতে বাজি ফাটানোয় ছাড় আছে। বাজিবাজারে আমরা ইন্সপেকশন করছি। ”
কলকাতার বাজি বাজারে চকোলেট বা কালী পটকা রাখা হবে না বলেই দাবি বিক্রেতাদের। টালা পার্ক বাজি বাজার কমিটির সদস্য বলেছেন, “এটা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। অনেক আইনি জটিলতা, ঝড়ঝাপটা সামলাতে হয়েছে। এবার আমাদের মনে হয় ব্যাবসাপত্র ভালই হবে।” তিনি বলেন, “১০০০ ধরনের আতসবাজি রয়েছে। সেগুলি সবই ছিল ১২৫ ডেসিবেলের নীচে। আমরা দেখেছিলাম ১২৩ ডেসিবেলের ওপরে নয় কালীপটকা, বোমা। সবই তার নীচে। রকেট, আকাশের শর্টার, দোদোমা, কালীপটকা সব এবারের পুজোয় পাওয়া যাবে। এবারে সারা বাংলাতেই এই বাজি পাওয়া যাবে। ”
কলকাতার বাইরে বাজি বাজারে ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে চকলেট বোম, কালীপটকা। তবে ক্রেতারা অনেকেই দাবি করছেন, তারা চকলেট ফাটাতে চান না। তবে এই আশ্বাসে দীপাবলিতে শব্দাসুর জব্দ হচ্ছে না বলেই মত অনেকের। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছেন সবুজ মঞ্চ। সেই মামলা ইতিমধ্যে গৃহীতও হয়েছে।