কলকাতা: আধার কার্ড দিন, প্যান কার্ড দিন, লাগবে পাসপোর্ট সাইজ ছবিও…। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে নেহাত কম হ্যাপা পোয়াতে হয় না। কিন্তু খণ্ডঘোষের গ্রামবাসীদের যে অভিযোগ সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নথি তো দূরের কথা, একটা সই পর্যন্ত নেই, অথচ খোলা হয়ে গিয়েছে অ্যাকাউন্ট। যাঁদের নামে অ্যাকাউন্ট তাঁরা জানেনও না। এমনটাও হয় নাকি? এমন ঘটনার শিকার আপনি-আমি হচ্ছি না, সেটাই বা কে বলতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে নথি সংগ্রহ করে এমন সব অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। আর টার্গেট করা হচ্ছে গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের, যাঁরা তুলনায় কম সচেতন।
কীভাবে এমন প্রতারণার শিকার হতে পারেন আপনি? শুধু খণ্ডঘোষ নয়, রাজ্যে এমন ঘটনার উদাহরণ রয়েছে অনেক। যা খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, ঠিক কী কী ভাবে এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর বীরভূমের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চে বেশ কিছু বেনামী অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হদিশ পেয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনাচক্রে ওই ব্যাঙ্কে পরে আগুন লেগে যাওয়ায় তেমন কোনও নথি পাওয়া যায়নি।
ধান কেনার নামে প্রতারণা: বিস্ফোরক অভিযোগ ওঠে শিলিগুড়ির হাতিঘিষা-নকশালবাড়িতে। হাতিঘিষায় গ্রামবাসীদের বলা হয়েছিল, অ্যাকাউন্ট খুললে মিলবে ৫০০ টাকা করে। কেন দেওয়া হবে ৫০০ টাকা? কৃষক হিসেবে ওই টাকা দেওয়া হবে বলে দাবি করেছিল একদল লোক। সেই মতো খোলা হয় অ্যাকাউন্ট। ৫০০ টাকা করে পেতেও থাকেন হাতিঘিষার বাসিন্দারা। কিন্তু প্রশ্ন হল, এরা তো সবাই কৃষকই নন, তাহলে কিসের টাকা? আর অ্যাকাউন্টের নথিই বা কোথায় গেল?
ছাগল কেনার লোন: নকশালবাড়িতে অভিযোগ ওঠে, ছাগল কেনার ঋণ দেওয়া হবে বলে নথি সংগ্রহ করা হয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে। তারপর গ্রামবাসীরা শুধু দেখতে পান, তাঁদের মোবাইলে টাকা ‘ডেবিট’ আর ‘ক্রেডিট’ হওয়ার মেসেজ ঢুকছে। সেই টাকার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্কই নেই।
শস্যবীমার নামে প্রতারণা: বাঁকুড়ায় আবার অন্য কায়দা। শস্যবীমা দেওয়া হবে বলে খুলে দেওয়া হল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। অথচ অভিযোগ ওঠে, কৃষকরাই পাচ্ছেন না সেই বীমার টাকা। সুতরাং কী কী পন্থায় ওই চক্রগুলো কাজ করতে পারে, তা সহজেই অনুমানযোগ্য।
সিমের নামে জালিয়াতি: বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ফ্রি-তে ব্যবহার করার প্রলোভন দেখিয়ে আঙুলের ছাপ নিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিম, নেওয়া হচ্ছে আধার কার্ড ও ছবি। সেখান থেকেও ঘটতে পারে প্রতারণা। এমন উদারহণও রয়েছে এ রাজ্যে।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস, জমি রেজিস্ট্রির অফিস, সাইবার ক্যাফে সহ একাধিক জায়গা থেকে হতে পারে তথ্য চুরি। অর্থাৎ যে সব ক্ষেত্রে আধার কার্ড-প্যান কার্ড বা ছবি দিতে হয়, সেখানেই থাকে ঝুঁকি।