কলকাতা: উত্তর প্রদেশের চন্দৌসি-র বাসিন্দা রাজীব কুমার ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস। তিনি বোধ হয় হাতে গোনা আইপিএস-দের মধ্যে একজন যিনি চাকরির প্রথমার্ধে দক্ষতার জন্য উচ্চ প্রশংসিত হয়েছেন, আর চাকরির দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক বিতর্ক তাঁকে ঘিরে রেখেছে। সেই রাজীব কুমারই হচ্ছেন রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি। বৃহস্পতিবার থেকেই দায়িত্ব নেবেন তিনি। একসময় কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিলেন রাজীব কুমার। তার আগে এসটিএফ-এর শীর্ষ পদ সামলেছেন তিনি, ছিলেন বিধান নগরের পুলিশ কমিশনার পদেও। একসময় আন্তর্জাতিক সীমান্তও ছিল যাঁর নখদর্পণে, পরবর্তীতে সেই দুঁদে অফিসারের নাম জড়িয়ে যায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে।
জানা যায়, নেপাল, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল রাজীব কুমারের নেটওয়ার্ক। একজন অধ্যাপকের ছেলে রাজীব কুমার রুরকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। সারদা বিতর্কে তাঁর নাম জড়ানোর পর রাজীব কুমারের মা মুন্নী দেবী বলেছিলেন, ‘মেরা বেটা কোই গলত কাম নেহি করেগা (আমার ছেলে কোনও ভুল করতে পারে না)।’ কিন্তু বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি।
খাদিম কর্তা অপহরণ থেকে শুরু করে ২০০২ সালে আমেরিকান সেন্টার হামলার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রাজীব কুমারের। একসময় বাম সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজীব কুমার মমতার ভরসার জায়গা হয়ে ওঠেন খুব শীঘ্রই। ভিনরাজ্যের এসটিএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার সুবাদে তাঁর ওপর ভরসা বেড়েছিল আরও। শুধু তাই নয়, মমতা সরকারের আমলে মাওবাদী দমনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় প্রথম গ্রেফতারি তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল।
সূত্রের খবর, তথ্য ও প্রযুক্তি দফতরের সচিব থাকার সময়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় একাধিক বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজীব কুমারের ওপর ভরসা করেছেন। শোনা যায়, আইপিএস পোস্টিং-এর ক্ষেত্রেও তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিতেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে রাজীব কুমারকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদে নিযুক্ত করা হয়। আর ২০১৯ সালে সারদা চিটফান্ড মামলার তদন্তে তাঁর বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআই। পুলিশের কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই হানার প্রতিবাদে রাস্তায় বসে ধরনা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের সেরা অফিসার হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন রাজীব কুমারকে। তারপর থেকে পুলিশের শীর্ষপদে আর ফেরেননি তিনি। চার বছর পর আরও একবার পুলিশের শীর্ষপদে দায়িত্ব পেলেন তিনি।