কলকাতা: চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেই বালিগঞ্জে নির্মাণ সংস্থা ‘গজরাজ গ্রুপ’ সংস্থার কর্ণধার বিক্রম শিকারিয়ার বাড়ি ও অফিসে হানা দিয়েছিল ইডি। দিল্লি ইডি দফতরের আধিকারিকদের অভিযানের ব্যাপারে টেরই পাননি কলকাতার আধিকারিকরা। ১০-১২ জনের দিল্লির আধিকারিকদের দল হানা দেয় বালিগঞ্জে। কয়লা পাচারের কিংপিন লালা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী রত্নেশ ভর্মাকে জেরা করে বেশ কিছু নির্দিষ্ট সূত্র পায় ইডি। তা থেকে এই ‘গজরাজ গ্রুপ’ সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে বলে খবর। তার ভিত্তিতেই বুধবার সন্ধ্যার তল্লাশি। টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন, নির্মাণ সংস্থার মালিক ব্যবসায়ী বিক্রম শিকারিয়ার সঙ্গে রয়েছেন আরও একজন ধাবা মালিক। তাঁরা মূলত ‘ফ্রন্ট ম্যান’ হিসাবে কাজ করতেন। বিক্রমের ২০-৩০টা কোম্পানি রয়েছে, তার বেশিরভাগই নিজে ডিরেক্টর। বাকিগুলো পরিবারের সদস্যরা কর্ণধার। সেই কোম্পানিগুলিকে ব্যবহার করে কয়লারই কালো টাকা সাদা করা হয়েছে, অন্তত তেমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তারই একটা অংশ বুধবার নগদে উদ্ধার করেছেন বলে দাবি ইডির। বিক্রম ও তাঁর সঙ্গীদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন, এই টাকার উৎস কী? কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গজরাজ গ্রুপের উত্থানই হয়েছিল কোভিড পরিস্থিতিতে। সে সময় বাকি সমস্ত জায়গায় নির্মাণ ব্যবসার মন্দা চলছিল। কোভিডকালের মধ্যে কীভাবে গজরাজ গ্রুপ এতটা ফুলে ফেঁপে উঠল, সেটাই ইডি-র স্ক্যানারে। ইডি জানতে পেরেছে, গজরাজ গ্রুপ মূলত নির্মাণ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করত। বেশিরভাগ প্রজেক্টই দক্ষিণ কলকাতার। গত চার বছরে ৪২টি নির্মাণ করেছে এই গ্রুপ। আধিকারিকদের অনুমান, কয়লা পাচারের কালো টাকা এই নির্মাণের মাধ্যমেই সাদা করা হয়েছে। এর আগেই ইডি আধিকারিকরা এই সংক্রান্ত বেশ কিছু সূত্র পেয়েছিলেন। রত্নেশ ভর্মা যখন ইডির জেরায় আরও বেশ কিছু তথ্য দেন, তখন অনুমান আরও জোরাল হয়।
উল্লেখ্য রত্নেশ ভর্মা কয়লা পাচারের কিংপিন লালা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘদিন ফেরার ছিলেন। গত মাসেই তিনি আসানসোল সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে জেরা করেন সিবিআই আধিকারিকরা। যেহেতু গরু ও কয়লা পাচার মামলায় ইডি ও সিবিআই সমান্তরালভাবে তদন্ত করছে, আধিকারিকরা সেক্ষেত্রে তথ্য বিনিময় করেন। সেই জায়গা থেকেই বেশ কিছু নতুন সূত্র পান। তারপরই ইডি-র ঝটিকা অভিযান। দিল্লি আধিকারিকদের এই অভিযানের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। তা না হলে নথি লোপাট হওয়ার আশঙ্কা ছিল।