কলকাতা: নববর্ষের সকালে আমজনতার জন্য খুলে গিয়েছে রাজভবনের ফটক। রাজভবনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগ স্থাপনের এক অনন্য উদ্যোগ। রাজভবনকে জনরাজভবন করার দিকে আরও বড় পদক্ষেপ। যে প্রাসাদোপম সাদা বাড়ি এতদিন দূর থেকে দেখতে হত, সেই রাজভবন এবার ঘুরে দেখলেন রাজ্যবাসী। শুরু হয়েছে রাজভবনের হেরিটেজ ওয়াক। ১৮০৩ সালে তৈরি হওয়ার পর ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই রাজভবন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়া থেকে আধুনিক ভারতের বিভিন্ন ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাজভবনের আনাচে কানাচে। এই রাজভবনেই রয়েছে এশিয়ার সবথেকে পুরনো লিফট। শুনলে অবাক হলেন, সেই লিফট এখনও সচল রাজভবনে। ১৮৬৩ সালে তৈরি হয়েছিল এই লিফট। তারপর থেকে অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকীকরণও করা হয়েছে ১৬০ বছরের পুরনো এই লিফটকে।
দুই শতকেরও বেশি সময় আগে তৈরি হয়েছিল এই রাজভবন। সেই সময় ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। তখন নামও রাজভবন ছিল না। সেই সময় এই বিশাল প্রাসাদের নাম ছিল গভর্নমেন্ট হাউজ়। এই ভবন নির্মাণের পর থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। রাজভবনে প্রথম গ্যাস এসেছিল ১৮৬৩ সালে। সেই সময় ব্রিটিশ উপনিবেশের গভর্নর জেনারেল ছিলেন এলগিন। তার পর ১৮৭২-৭৬ সালে নর্থব্রুক গভর্নর জেনারেল থাকাকালীন প্রথম বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছেছিল রাজভবনে। ১৮৭২ সালে রাজভবনে বসানো হয়েছিল বৈদ্যুতিন বেল। লাইট-ফ্যান সেসব আরও পরে। লর্ড কার্জনের আমলে ১৮৯৯ সালে রাজভবনে প্রথম বৈদ্যুতিন আলো আসে। তারপরের বছর অর্থাৎ, ১৯০০ সালে আসে বৈদ্যুতিন পাখা। আর এই সময়ের মধ্যেই রাজভবনে বসানো হয়েছিল লিফট। এশিয়ার প্রথম লিফট বসেছিল এই রাজভবনেই। রাজভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এই লিফটটি বসানো হয়েছিল। তৈরি করেছিল ওটিস এলিভেটর কোম্পানি। সেই সময় এটি দেখতে ছিল একটি বড়সড় মাপের পাখির খাঁচার মতো।
কলকাতায় এর আগে এমন জিনিস আগে কখনও দেখা যায়নি। অতীতে এটিকে কার্জনের লিফট বলে ডাকত লোকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দুইবার এটি লিফটের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। প্রথমবার ১৯৬৯ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে। আর এই এলিভেটর এখনও চলে রাজভবনে।