TV9 Exclusive: ২ টাকার ওষুধ কিনছে ১২ টাকায়! স্বাস্থ্য দফতরের কোষাগার থেকে ‘লুঠ’ ৫০ কোটি টাকা! চাঞ্চল্যকর তথ্য

TV9 Bangla Digital | Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

May 30, 2022 | 11:19 AM

TV9 Exclusive: রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। ফের একবার অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে।

TV9 Exclusive: ২ টাকার ওষুধ কিনছে ১২ টাকায়! স্বাস্থ্য দফতরের কোষাগার থেকে ‘লুঠ’ ৫০ কোটি টাকা! চাঞ্চল্যকর তথ্য
স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে উঠেছে প্রশ্ন

Follow Us

সৌরভ দত্ত, কলকাতা: সরকারের ভাঁড়ারে নাকি টাকার অভাব! লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকাই ঠিক মতো জোগানো যাচ্ছে না। আর এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের বিরুদ্ধে উঠল বিস্ফোরক অভিযোগ। চড়া দরে ওষুধ কিনে কার্যত নষ্ট করা হয়েছে রাজ্য সরকারের টাকা। ট্যাবলেট পিছু  ২ টাকা দরে যে ওষুধ কেনা যেত, সেটাই দিনের পর দিন ১২ টাকারও বেশি দাম দিয়ে কেনা হয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় রাজ্যের কোষাগারের প্রায় ৫০ কোটি টাকা ‘লুঠ’ হয়েছে বলে অভিযোগ। কার গাফিলতিতে দিনের পর দিন এ ভাবে সাধারণ মানুষের করের টাকা নষ্ট হল, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

ঠিক কী অভিযোগ?

এক বছরের‌ও বেশি সময় ধরে‌ এ ভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চড়া দরে ডায়াবিটিসের ওষুধ কেনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডায়াবিটিসের একটি ওষুধের জেনেরিক প্রোডাক্ট না বেরনোয় প্রতি ট্যাবলেট ১২ টাকা ৪৩ পয়সা দরে কিনেছিল সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর (সিএম‌এস), যা জেনেরিক ওষুধের দামের তুলনায় বেশি। পরে সংশ্লিষ্ট ওষুধের জেনেরিক প্রোডাক্ট বাজারে এসে যাওয়ার পরও সেই ১২ টাকা ৪৩ পয়সা দরেই কেনা হচ্ছিল ওই ওষুধ। হিসেব মত ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে ওই ওষুধের প্রোপাইটরি পিরিয়ড। অর্থাৎ তারপর থেকেই কম দামে ওষুধ কেনার কথা। তা সত্ত্বেও কেন কম দামে কেনা হল না।

পেমেন্ট বন্ধ করার নির্দেশ স্বাস্থ্য ভবনের

কত টাকা অতিরিক্ত খরচ হল?

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১২ টাকা ৪৩ পয়সা দরেই ডায়াবিটিসের ওষুধটি কিনেছে স্বাস্থ্য ভবন। যার ফলে সরকারের ঘর থেকে অতিরিক্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকা বেরিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ২০২১ সালের শেষে বিষয়টি নজরে আসার পরে সবকটি মেডিক্যাল কলেজের এম‌এসভিপি, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ‘স্টপ পেমেন্ট’ করতে বলা হয়।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে ২৮ কোটি ৬১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৭৩ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২০ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৪৯ টাকার ওষুধ কেনা হয়। মোট খরচের পরিমাণ ৪৯ কোটি ৩৬ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯২৩ টাকা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রোপাইটরি পিরিয়ড শেষ হ‌ওয়ায় প্রতি ট্যাবলেট ২ টাকা দরে কিনতে সরকারের খরচ পড়ার কথা ৩৮ লক্ষ টাকা। সেই জায়গায় সাড়ে ২৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। জেনেরিক ওষুধের দরে যেখানে ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা খরচ করলেই হত, সেখানে খরচ হয়েছে ২০ কোটি ৭৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৪৯ টাকা। প্রশ্ন উঠছে, দফতরের কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতায় এই ঘটনা? নাকি জেনেবুঝে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মুনাফা লুঠের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে? এর পিছনে কারা জড়িত? তাঁদের বিরুদ্ধে কোন‌ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

ঠিক কী নিয়ম?

প্রত্যেক ওষুধের একটা জেনেরিক প্রোডাক্ট থাকে, সেই প্রোডাক্টই বাজারে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করে। আর সরকার সেই সংস্থার থেকেই ওষুধ কেনে যারা জেনেরিক প্রোডাক্ট সবথেকে কম দামে দেয়। আর যদি জেনেরিক প্রোডাক্ট না থাকে, তাহলে অপেক্ষাকৃত চড়া দামে কিনতে হয় ওষুধ। সেই সময়টাকেই বলা হয় প্রোপাইটরি পিরিয়ড। আর সেই সময় শেষ হলে, সরকার কম দামে ওষুধ কেনে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উচিত স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো, আবার স্বাস্থ্য দফতরেরও উচিত সে দিকে নজর রাখা।

কী বলছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা?

স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা সংশ্লিষ্ট বিভাগের তরফে তদন্ত করা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

একদিকে যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে বলতে শোনা গিয়েছে যে জনমুখী প্রকল্পের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যকে। তারই মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দফতরের ভূমিকা নিয়ে। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলেন, একদিকে যখন টাকার অভাব, সেখানে জীবনদায়ী ওষুধ নিয়ে যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই উদ্বেগের। এখন যা পরিস্থিতি তাতে নানা জায়গা থেকে বেনিয়মের অভিযোগ সামনে আসছে। এই ঘটনায় যথাযোগ্য তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

Next Article