কলকাতায় কি বৃষ্টি কমে আসছে? অন্তত ৩০ বছরের তথ্য না দেখে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয় না আবহাওয়া দফতর। তবে ২০ মাসের তথ্য নিশ্চিন্তে রাখবে না কলকাতাকে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি অগাস্ট, ২০ মাসে মাত্র ৩ দিন ভারী বৃষ্টির দর্শন পেয়েছে আলিপুর। ২ অগাস্ট সকাল পর্যন্ত যে ভারী বৃষ্টিপ্রাপ্তি, সেটাও জুটল পাক্কা ৩২২ দিন পর।
২৩-এ নয়, তার জন্য ফিরে যেতে হবে ২২-এ। ১৩ সেপ্টেম্বর একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে ৭১.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে। তার পর আর ভারী বর্ষণ দেখেনি কলকাতা। আর দেড় মাস পেরলেই বর্ষপূর্তি হয়ে যেত।
এই ৩২২ দিনের মধ্যে আবার ছিটেফোঁটা বৃষ্টি না হওয়া ১৪১ দিনও রয়েছে। বাইশের ২৫ অক্টোবরের পর এ বছরের ১৭ মার্চ প্রথম বৃষ্টি মাপার সুযোগ পায় আলিপুরের রেনগেজ যন্ত্র। বর্ষা আসার পরও ছবিটায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। জুনে ঘাটতি, জুলাইয়ে ঘাটতি। মঙ্গলবার পর্যন্তও ৫০ শতাংশের উপর ঘাটতি ছিল কলকাতায়।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘একটা কারণ তো অবশ্যই নিম্নচাপের অবস্থান। চলতি নিম্নচাপের আগে পর্যন্ত, সব ক’টি নিম্নচাপই বাংলার দক্ষিণে ছিল। ওড়িশা বা অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে স্থলভাগে ঢুকেছে। ফলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গই বঞ্চিত থেকে গিয়েছে।’
শেষমেশ সহায় হল অতি গভীর নিম্নচাপ। বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণবঙ্গের উপর সরে আসা নিম্নচাপের হাত ধরেই ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি আলিপুরে। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে ভারী বর্ষণের তকমা দেওয়া হয়। ৩২২ দিন পর আলিপুরে সেই শর্তপূরণ হল।
ভারী বৃষ্টি নিয়ে কলকাতার বঞ্চনা এই প্রথম নয়। বাইশের ১৩ সেপ্টেম্বরও লম্বা প্রতীক্ষা-শেষে ভারী বৃষ্টি পেয়েছিল কলকাতা। ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ৭৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় মহানগরে। তার পর পাক্কা ২৮০ দিনের বিরতি।
২ অগাস্ট সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপ্রাপ্তির পরও বিপুল ঘাটতি কলকাতায়। এই মুহূর্তে বর্ষায় ঘাটতি ৩৯ শতাংশ। তাত্পর্যপূর্ণ হল, ৬ মেট্রো শহরের মধ্যে শুধু আলিপুরেই ঘাটতি। জুনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মুম্বই, হায়দরাবাদ, দুই শহরেই ১৬০ শতাংশের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দিল্লিতেও ৬১% অতিবৃষ্টি। বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ে বৃষ্টির পরিমাণ কলকাতার তুলনায় কম, কিন্তু বরাদ্দের চেয়ে প্রাপ্তি বেশি।
একমাত্র কলকাতারই শুখা দশা। এতে কলকাতা পুরসভা ছাড়া আর কারোরই খুশি হওয়ার কথা নয়। ভ্যাপসা গরমে ভোগান্তি বাড়ছে। উদ্বেগ বাড়ছে মহানগরের জলস্তর নিয়েও। ভারী বৃষ্টি না হলে, ভূগর্ভে জলের রিচার্জ কী ভাবে হবে? একদিন ভারী বৃষ্টি হল বটে, নতুন করে ধারাবর্ষণের সম্ভাবনা খুবই কম। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি অনেকটাই কমে যাবে। এ বার উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা।’