Congress in West Bengal: ক্ষমতা থেকে ‘শূন্য’, কোন পথে বাংলা ‘হাত’-ছাড়া হল কংগ্রেসের

Jun 28, 2024 | 6:04 PM

Congress in West Bengal: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় দুটি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। আর সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল আরও খারাপ। বহরমপুরে নিজের গড়ে হেরে গিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শুধুমাত্র মালদা দক্ষিণ আসনে জিতেছে কংগ্রেস। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের হাত ধরে খাতা খুলতে পারেননি অধীররা। তবুও বাংলায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় কংগ্রেস। কোন পথে তা সম্ভব? কী ভাবছেন কংগ্রেস নেতৃত্বে?

Congress in West Bengal: ক্ষমতা থেকে শূন্য, কোন পথে বাংলা হাত-ছাড়া হল কংগ্রেসের
বাংলায় কীভাবে নিজেদের শক্তি হারাল কংগ্রেস?

Follow Us

কলকাতা: ঘরে ঘরে হাত। স্বাধীনতার পর দেশের কোণায় কোণায় তখন কংগ্রেসের পতাকা। বাংলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ে কংগ্রেস। কিন্তু, সময় যত গড়িয়েছে, হাতের প্রভাব কমতে শুরু করে রাজ্যে। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে এখন বিধানসভায় শূন্য হাত। ভোটপ্রাপ্তির হার কমতে কমতে আজ ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। বাংলায় কংগ্রেস বলতে কেন এখন মানুষ নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকার কোথাই বোঝে? স্বাধীনতার ৭৭ বছরে কোন পথে বাংলায় প্রভাব হারাল কংগ্রেস?

খাদ্য আন্দোলনের প্রভাব-

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবে এক দশক কেটেছে। রাজ্যে মারাত্মক আকার ধারণ করে খাদ্যসঙ্কট। চারদিকে খাদ্যের হাহাকার। খিদের জ্বালায় কাঁদছে শিশুরা। অসহায় পরিবার। অন্যের বাড়ি থেকে ভাতের ফ্যান চেয়ে এনে খাওয়াচ্ছেন মা। ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকে আন্দোলন। সেই আন্দোলন চরম আকার নিল ১৯৫৯ সালের ৩১ অগস্ট। হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হলেন কলকাতায়। রাজভবনের সামনে মিছিল আটকায় পুলিশ। কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু হয় লাঠিচার্জ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। আর তাতেই পেটে খিদে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৮০ জন আন্দোলনকারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মজুতদার আর কালোবাজারিদের দাপট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য রাজ্যে খাদ্যসঙ্কট চরমে পৌঁছেছিল। কিন্তু, এর রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছিল সমাজজীবনে। গ্রাম বাংলার মানুষের মধ্যে বামেদের প্রভাব বাড়তে থাকে। এর কয়েক বছর পর ১৯৬৫-৬৬ সালে ফের রাজ্যে খাদ্যসঙ্কট তীব্র আকার নেয়। সেইসময় অল্পবয়সি দুই ছাত্র নুরুল ইসলাম ও আনন্দ হাইত মিছিলে গিয়ে প্রাণ হারান। খাদ্য আন্দোলন ক্রমশ তীব্র হয় বামেদের হাত ধরে। আর তার সঙ্গে বাংলায় আলগা হতে থাকে কংগ্রেসের হাত।

হাতে চিড়, আত্মপ্রকাশ বাংলা কংগ্রেসের-

স্বাধীনতার পর সময় যত গড়িয়েছে, দেশজুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ক্রমশ তাদের শক্তি বাড়িয়েছে। ছয়ের দশকের শুরুতে মাদ্রাজের মুখ্যমন্ত্রী কামরাজের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পনা নিল কংগ্রেস। কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলিতে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা কমানো হবে। আর নেতাদের আরও বেশি করে সাংগঠনিক কাজে লাগানো হবে। সেইমতো বাংলায় মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হল অজয় মুখোপাধ্যায়কে। স্বাধীনতা সংগ্রামী অজয় মুখোপাধ্যায় তখন ছিলেন সেচ ও জলপথের দায়িত্বে ছিলেন। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর নিজের জেলা মেদিনীপুরের(তখনও অবিভক্ত) গ্রামেগঞ্জে গিয়ে সভা করতে শুরু করলেন। কিন্তু, কংগ্রেসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল আকার নিতে থাকে। অজয় মুখোপাধ্যায়কে জেলা ও রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এর ফলই বাংলা কংগ্রেসের জন্ম রাজ্যে। কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বীতশ্রদ্ধ অজয় মুখোপাধ্যায় নতুন দল গঠন করেন।

আর নতুন দল গঠন করেই নির্বাচনে কংগ্রেসকে ধাক্কা দেন অজয় মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৭ সালে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে রাজ্যে সরকার গড়ে বাংলা কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী হন অজয় মুখোপাধ্যায়ই। ১৯৬৭ সালের ১ মার্চ থেকে ওই বছরের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল সেই সরকার। কিন্তু, কংগ্রেসের হাতের শক্তি ক্রমশ যে বাংলায় কমছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯৬৯ সালে ফের সিপিএমের সঙ্গে জোট করে রাজ্যে সরকার গঠন করে অজয় মুখোপাধ্যায়ের বাংলা কংগ্রেস। সেই সরকার এক বছরের মতো ছিল।

পরে কংগ্রেসে ফিরে এসেছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর দল কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যায়। এমনকি, ১৯৭১ সালে তমলুক আসনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন। সেই সরকার টিকেছিল মাত্র ৮৭ দিন। অজয় মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসে ফিরে এলেও ততদিনে রাজ্যে বামেদের উত্থান শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের হাত আর আগে মতো শক্তিশালী হয়নি।

প্রণবের রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস-

অজয় মুখোপাধ্যায় তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই অজয় মুখোপাধ্যায়ের পথে হেঁটেই ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস গড়েন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে কংগ্রেসের সেই ভাঙন তিন বছর ছিল। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যায় রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস। ফিরে আসেন প্রণববাবুও। কিন্তু, কংগ্রেসে ভাঙনের রাজনীতির শিকড় যে গভীরে প্রবেশ করেছে, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয় বছর নয়েক পর।

.

মমতার নতুন দলের উত্থান, বাংলায় কংগ্রেসের প্রভাব শুধু প্রভাবশালী নেতাদের এলাকায়-

১৯৯৭ সালের অগস্ট। নেতাজি ইন্ডোরে কংগ্রেসের তিনদিনের প্লেনারি সেশন। সেই প্লেনারি সেশনের থেকে রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের নজর ছিল একটি ‘আউটডোর’ সমাবেশে। ময়দানের গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ওই সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি তখন সোমেন মিত্র। আর কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি সীতারাম কেশরী। ময়দানের ওই সমাবেশ না করার জন্য মমতাকে অনুরোধ করেন কেশরী। কিন্তু, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন মমতা। সমাবেশ করেন। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে কংগ্রেস। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দলের এই সিদ্ধান্ত কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের কাছে ব্যুমেরাং হয়ে দেখা দিল।

১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি নতুন দল গড়লেন মমতা। নাম দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার রাজনীতির স্রোতও ধীরে ধীরে গতিপথ বদলাতে লাগল। রাজনীতির কারবারিরা বলেন, মমতার তৃণমূলের শিকড় যত গভীরে যেতে লাগল, কংগ্রেসের শিকড় সঙ্কুচিত হতে শুরু করল। রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠল তৃণমূল। রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় শুধু প্রভাব দেখা গেল কংগ্রেসের। যে এলাকায় কংগ্রেসের কোনও নেতার প্রভাব রয়েছে, সেখানেই জন-সমর্থন সীমিত রইল হাত শিবিরের।

.

কংগ্রেস ছেড়েও ফিরে এলেন সোমেন-

যে সোমেন মিত্র কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন মমতা পৃথক দল গড়লেন, সেই সোমেন মিত্রর সঙ্গেও একসময় কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়ল। ২০০৮ সালের জুলাইয়ে কংগ্রেস ছাড়লেন সোমেন। গড়লেন নতুন রাজনৈতিক দল। প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস। তবে বেশিদিন নিজের রাজনৈতিক দল টিকিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। ২০০৯ সালের অক্টোবরে তৃণমূলের সঙ্গে মিশে যায় তাঁর দল। এবং সোমেন যোগ দেন মমতার দলে। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে কংগ্রেসে ফিরে আসেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের ছোটদা সোমেন। ২০১৮ সালে রাজ্য কংগ্রেসের ফেল হাল ধরেন তিনি। ২০২০ সালের ৩০ জুলাই তাঁর মৃত্য হয়। সেদিন পর্যন্ত রাজ্য কংগ্রেসের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।

একাধিক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হাত ছেড়েছেন-

অজয় মুখোপাধ্যায় থেকে সোমেন মিত্র। রাজ্য কংগ্রেসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে ছিল, তাঁদের অনেকেই এক সময় দল ছেড়েছেন। পরে কয়েকজন ফিরেও আসেন। অজয় মুখোপাধ্যায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়, সোমেন মিত্ররা ফিরে এসেছেন। আবার মানস ভুঁইঞার মতো কেউ কেউ নতুন দলেই রয়ে গিয়েছেন। অনেকে ফিরে এলেও তাঁদের সঙ্গে যেসব সমর্থক গিয়েছিলেন, তাঁরা হয়তো সবাই ফিরে আসেননি কংগ্রেসে। ফলে ধাক্কা খেতে হয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলকে।

বাংলায় কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা-

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলায় সরকার গড়ে কংগ্রেস। রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ। মোট ২ দফায় রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হয়েছেন তিনি। প্রথম দফায় ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট থেকে ১৯৪৮ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় ১৯৬৭ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ১৯৬৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মোট ২৫০ দিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। ১৯৪৮ সালের ২৩ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজ্যের প্রশাসনিক পদে ছিলেন। ১৯৬২ সালের ১ জুলাই প্রয়াত হন বিধানচন্দ্র। মোট ১৪ বছর ১৫৯ দিন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

বাংলায় কংগ্রেসের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী হলেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। ১৯৬২ সালের ৯ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি। ১৯৬৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। ৪ বছর ২৩৪ দিন রাজ্যের দায়িত্বভার সামলেছেন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। অজয় মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসে ফিরে আসার পর ১৯৭১ সালে ৮৭ দিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

বাংলায় কংগ্রেসের শেষ মুখ্যমন্ত্রী হলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ১৯৭২ সালের ২০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন। আর বাংলায় কংগ্রেসের শেষ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক প্রধান পদে শেষ দিন ছিল ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল। ৫ বছর ৪১ দিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর।

এগারোয় বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করতে কংগ্রেসের ভূমিকা-

৩৪ বছর পর বামেদের বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কৃতিত্ব পায় তৃণমূলই। কিন্তু, বামেদের ক্ষমতা থেকে হঠাতে হাত ছিল কংগ্রেসেরও। এগারোর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল হাত শিবির। ৬৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪২টি আসন পায় তারা। মন্ত্রিত্বেও যোগ দেয়।

কিন্তু, দেড় বছরের মধ্যেই জোটে ফাটল। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ-সহ একাধিক ইস্যুতে সংঘাতের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসে তৃণমূল। উল্টোদিকে, রাজ্য সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে কংগ্রেস।

চোদ্দোর লোকসভা নির্বাচন-

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৬টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। পাঁচ বছর পর রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতা বদল হয়েছে। শাসকদলের সঙ্গে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে চোদ্দোর লোকসভা নির্বাচনে চারটি আসনে জেতে কংগ্রেস। মালদার দুটি এবং মুর্শিদাবাদের দুটি। এই দুই জেলা ছাড়া রাজ্যে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি হাত শিবির।

ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের হাত ধরল কংগ্রেস-

এগারোর নির্বাচনে তৃণমূলের হাত ধরেছিল কংগ্রেস। আর পাঁচ বছর পর বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা। যে বামেদের বিরুদ্ধে একসময় আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা, সেই বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঝাঁপালেন। তৃণমূলকে হারাতে পারল না জোট। তবে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে দুটি আসন বেশি পেল কংগ্রেস। ষোলোর নির্বাচনে ৪৪টি আসনে জেতে হাত শিবির।

উনিশের লোকসভা, একুশের বিধানসভা ও চব্বিশের লোকসভায় ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত কংগ্রেস-

ষোলোর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট করেছিল কংগ্রেস। তিন বছর পর উনিশের লোকসভা নির্বাচনে জোট নিয়ে আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। আসন বণ্টন নিয়ে মতপার্থক্য হয়। বাম ও কংগ্রেস জোট না বেঁধেই নির্বাচনে লড়ে। উনিশের নির্বাচনে বামেরা শূন্য হলেও বাংলা থেকে দুটি আসন পায় কংগ্রেস। বহরমপুরে নিজের গড়ে জেতেন অধীর চৌধুরী। আর প্রয়াত গনি খানের গড় মালদায় একটি আসন পায় হাত শিবির। মালদা দক্ষিণ আসনে জেতেন গনি খানের ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী।

উনিশের নির্বাচনে জোট না হলেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের হাত ধরে কংগ্রেস। কিন্তু, জোট কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি ভোট ময়দানে। বাম ও কংগ্রেস কোনও আসনই পায়নি একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। বাংলায় উত্থান হয় বিজেপির।

একুশের নির্বাচনে শূন্য হাতে ফিরতে হলেও বছর দুয়েক পর মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে সফল হয় জোট। তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার মৃত্যুতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন হয়। সেই ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট করে জেতেন কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাস। রাজ্য রাজনীতিতে সাগরদিঘি মডেলের তত্ত্ব উঠে আসে। কয়েকমাস পর অবশ্য বাইরন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দেন।

.

বাইরন তৃণমূলে গেলেও সাগরদিঘি মডেলের উপর ভিত্তি করেই চব্বিশের লোকসভা ভোটে ভাল ফলের আশা করেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু, রাজ্যজুড়ে কংগ্রেসের সংগঠন কোথায়? রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, রাজ্যে কার্যত কিছু কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। অনেকে আবার কংগ্রেসকে এখন মালদা-মুর্শিদাবাদের দলও বলেন। কিন্তু, চব্বিশের নির্বাচনে মুর্শিদাবাদও খালি হাতে ফেরাল কংগ্রেসকে। বহরমপুরে নিজের গড়ে তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে হারেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের মুখ রক্ষা হয় প্রয়াত গনি খানের মালদায়। শুধু মালদা দক্ষিণে কংগ্রেসের দীপ জ্বালিয়ে রাখলেন ইশা খান চৌধুরী।

ধীরে ধীরে কংগ্রেসের বাংলায় প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার কারণ কী? হাত শিবির কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? কী বলছে কংগ্রেস?

কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, “একুশের নির্বাচনে আমরা খারাপ ফল করেছি। চব্বিশের নির্বাচনেও খারাপ ফল হয়েছে। কী করলে ভাল হত, কারও উপর দোষারোপ না করে, এখন কী করলে ভাল হবে, সেটা ভাবতে হবে। বুথ থেকে দলকে মজুবত করতে হবে।”

কংগ্রেস এখন কয়েকটি জায়গায় সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগকে গুরুত্ব দিলেন না কংগ্রেস এই নেতা। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠন শূন্য নয়। অনেক জায়গায় কংগ্রেস নেতারা বসে রয়েছেন। যুব সমাজকে সামনে রেখে এগোতে হবে। কেউ একা নেতা নন, নবীন-প্রবীণ মেলবন্ধনে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

তৃণমূলকে নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন না শুভঙ্কর সরকার। তিনি বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলিকে আমরা প্রধান শত্রু মনে করি না। তেমনই তৃণমূলকে আমরা প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করি না। কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হল বিজেপি। বিজেপির নামে ভয় পেয়ে এরাজ্যে লোকে তৃণমূলকে ভোট দেয়। আমরা যদি বিজেপিকে রোখার কথা বলতে পারি, তখন অনেক মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দেবেন।”

বাংলায় কংগ্রেসের ক্রমশ শক্তি হারানোর কারণ নিয়ে কী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, “রাজ্যে কংগ্রেস নেই এটা বলা যাবে না। তবে বিভিন্ন রূপে আছে। আসলে কংগ্রেস একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। কংগ্রেস ভেঙে বিভিন্ন রূপ নিয়েছে। এই রাজনৈতিক দল থেকে অনেকেই অন্য দলে গিয়েছেন। কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আবার কেউ কেউ অন্য দলে চলে গিয়েছেন। কংগ্রেস এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখান থেকে কেউ চলে যাবেন, আবার আসতেও পারেন।” তাপস রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের উদাহরণ দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বামেদের মতো কংগ্রেসের নির্দিষ্ট মতাদর্শ নেই। ফলে কংগ্রেস ছেড়ে তাপস রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা প্রথমে তৃণমূলে যান। তারপর বিজেপিতে গেলেন। রাজ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বের অভাবের কথাও তুলে ধরেন তিনি। তবে যেখানে কংগ্রেসের কোনও দৃঢ় নেতা রয়েছেন, সেখানে এখনও মাটি ধরে রেখেছে কংগ্রেস। অধীর চৌধুরীর কথা বললেন রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক।

কংগ্রেস ভেঙে অন্য দল গঠন হওয়ায় হাত শিবিরের শক্তি ক্রমশ কমেছে বলে মনে করেন শুভময় মৈত্র। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস ভেঙে অনেকবার অন্য দল হয়েছে। কিন্তু, বাংলায় কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর। সেইসময় বামেদের বিরোধিতায় মানুষ তৃণমূলকেই বেছে নেন।

বিজেপিকে রোখার কথা বলে হাত শক্ত করার আশায় কংগ্রেস। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে আসন বেড়েছে দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলের। যা বাংলায় টিম টিম করে জ্বলা কংগ্রেস নেতৃত্বকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে। ঘরে ঘরে হাত ফিরবে কি আর? সেই উত্তর লুকিয়ে ভবিষ্যতের গর্ভে।

Next Article