কলকাতা : বসিরহাটে দুই ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে অন্যতম অভিজিৎ বসু। অভিজিৎ বসুকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। সেখানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি ডিডি বিশ্বজিৎ ঘোষ। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়েছিল অভিজিৎ এবং কীভাবে এই কাণ্ড তারা ঘটিয়েছিল, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে অভিজিৎ।
পুলিশি জেরায় উঠে এসেছে, ২২ অগস্ট সত্যেন্দ্র চৌধুরী, অভিজিৎ বসু সহ আরও কয়েকজন ওই দুই ছাত্রকে একটি গাড়ির মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল। গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের। ঘটনাটি ঘটেছিল বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কোনও একটি জায়গায়। যখন তাদের হত্যা করা হয়েছিল, তখন সময় রাত ৯টা থেকে ১০ টার মধ্যে। এরপর দুই ছাত্রর দেহ নিয়ে গাড়িতে চেপে আরও এগিয়ে যায় অভিযুক্তরা। অনেকটা এগিয়ে গিয়ে, দুটি পৃথক পৃথক জায়গায় খালের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল ছাত্রদের দেহ। পুলিশি জেরায় এই কথা স্বীকার করে নিয়েছিল অভিজিৎ বসু।
তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, অতনু নামে ওই ছাত্র সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের বাইক কেনার জন্য। কিন্তু সত্যেন্দ্র সেটি কেনে না। উল্টে তার থেকে আরও টাকা দাবি করে। কিন্তু অতনু সেই টাকা দিতে রাজি হয়নি। এই থেকেই গোলমালের সূত্রপাত বলে তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানানো হয়েছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে।
এদিকে এতদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর বসিরহাটে মর্গ থেকে ওই দুই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়েছে। অভিজিৎকে জেরা করে হত্যার কথা জানার পরই পুলিশের তরফ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বারুইপুর, কলকাতা, বসিরহাট সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর শুরু করে। শনাক্তকরণ হয়নি, এমন কোনও দেহ কোথাও পড়ে রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়। সেই সূত্র ধরেই বসিরহাটের মর্গে তিনটি দেহের খোঁজ পাওয়া যায়, যেগুলির শনাক্তকরণ হয়নি।
প্রসঙ্গত, দুই ছাত্রদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে এসএসএস এসেছিল। কিন্তু জেরায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী ২২ অগস্টই হত্যা করা হয়েছিল ওই দুই ছাত্রকে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি আগে থেকেই খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল? ২২ অগস্টই যদি খুন করা হয়ে থাকে ওই দুই ছাত্রকে, তাহলে মুক্তিপণ চাওয়া হল কেন? প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি মুক্তিপণের গোটা বিষয়টি পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে আসছে।