কলকাতা: মায়ের জন্য দরজা খোলা, ছায়ের জন্য দুয়ার আঁটা… এ কী হতে পারে? প্রকারান্তরে ঠিক এই প্রশ্নটাই তুলে দিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। দুর্গাপুরে গণেশপুজোর অনুমতি চেয়েছিলেন মামলাকারীরা। অনুমতি দেয়নি আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। তাঁদের যুক্তি, ওই জমিতে শুধু সরকারি অনুষ্ঠান আর দুর্গাপুজো করার অনুমতি দেওয়া হবে। দুর্গাপুজো করা গেলে গণেশপুজো নয় কেন? এ তো পুরুষ দেবতাদের সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্য! কেন হবে? প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে, গণেশ-আরাধনার দরজা খুলে দিয়েছেন বিচারপতি ভট্টাচার্য।
২০১৪ সাল থেকে দুর্গাপুরের চতুরঙ্গ ময়দানে গণেশপুজো হচ্ছে। এ বার অনুমতি জোটেনি। অথরিটি জানিয়ে দেয় শুধু সরকারি অনুষ্ঠান আর দুর্গাপুজোতেই অনুমতি দেওয়া হবে। গত ডিসেম্বরে এই মর্মে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। উপায় না দেখে, শেষমেশ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় আয়োজকরা। সওয়াল-জবাব শুনে হতবাক বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, পুরুষ দেবতারা তো লিঙ্গবৈষম্যের শিকার! কেন শুধু দুর্গাপুজো আর সরকারি অনুষ্ঠানের অনুমতি? লর্ড গণেশের দোষ কোথায়? এডিডিএ অর্থাত্ আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির আইনজীবী সওয়ালে বলেন, দুর্গাপুজো আধা-ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্ঠান। এমন কথা শুনে হেসে ফেলেন বিচারপতি। বলেন, ও আচ্ছা! গণেশপুজো আধা-ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্ঠান নয় কেন? যদিও ফের পাল্টা যুক্তি দেন আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির আইনজীবী।
বলেন, এ রাজ্যে দুর্গাপুজোর জনপ্রিয়তা বেশি। এই যুক্তি খাঁড়া করে এডিডিএ-র আইনজীবী দাবি করেন, সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে কোনও জায়গায় ধর্মাচরণ মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না। তখন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, সরকারি অনুষ্ঠান আর দুর্গাপুজোর মধ্যে মিল কোথায়? সংবিধানের অনুচ্ছেদ চোদ্দোর সমানাধিকার উল্লেখ করে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, দুর্গাপুজো হলে অন্য ধর্মের উত্সবকে বা অনুমতি দেওয়া হবে না কেন? গণেশপুজোর অনুমতিই বা কেন দেওয়া হবে না? শেষে গণেশপুজোর অনুমতি দিয়ে বিচারপতির নির্দেশ, সমস্ত নিয়ম মেনে পুজো সেরে, ২২ সেপ্টেম্বর মাঠ ফেরত দিতে হবে এডিডিএ-কে। রায় শুনেই ব্যস্ততা শুরু দুর্গাপুরে। শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজও। অক্টোবরে দুর্গাপুজো, তার আগে হবে গণেশবন্দনাও।