প্রীতম দে: পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এ পুজো মানুষের পুজো। শহরের পুজো কমিটির অধিকাংশই এ বছর ঠিক করেছে, এবার দুর্গাপুজোর বাজেট লাগানো হবে মানব-কল্যাণের কাজে। আর সে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। পুজো মণ্ডপের মাঠ, ক্লাব ঘরে এবার কেউ করছেন অক্সিজেন পার্লার, কেউ গড়েছেন সেফ হোম। কোনও পুজো কমিটি এই করোনা বেলায় দুঃস্থদের দু’বেলা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এভাবেই চলছে এবারের পুজো প্রস্তুতি। এটাই যেন এবারের কমন ‘থিম’।
কুমোরটুলি সর্বজনীনের দেবাশিস ভট্টাচার্য্য সদ্য কোভিড জয় করে ফিরেছেন। বেশ সঙ্কটময় অবস্থা হয়ে পড়েছিল তাঁর। অক্সিজেন সঙ্কটে নিজে কাঁধে করে সিলিন্ডার ভরে পাড়ায় আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু আক্ষেপ করছেন “তেমন কিছুই তো করতে পারছি না।” অনেককেই করোনা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় মজুমদার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু এই অতিমারি পরিস্থিতিতে তিনি বসে নেই। বুকে পেসমেকার নিয়ে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। অবশ্য়ই বিনামূল্যে। এছাড়া কাউকে হাসপাতালে এমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা, ওষুধ-খাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এসব তো রয়েইছে। তাঁর কথায়, এবার “আমরা এবার নমো নমো করে পুজো করব। পুজো বাজেটের প্রায় পুরোটাই খরচ করব এইসব কাজে। এমনকি বহু শিল্পীও এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা কোনও পারিশ্রমিক নেবেন না।”
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষিতে এবার এটাই কলকাতার পুজো প্রস্তুতির চিত্র। এই তালিকাটা বেশ লম্বা। হাতিবাগান সর্বজনীন সম্পাদক সৈকত নায়েক, দমদম পার্কের রবীন গাঙ্গুলি, অবসর শ্যামল নাথ দাস বেহালা নতুন দলের সন্দীপন ব্যানার্জি, বালিগঞ্জ কালচারালের অঞ্জন উকিল- এঁরা সকলেই করোনাজয়ী। করোনার বিরুদ্ধে সামনে থেকে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন। অনেকে আর ফিরতে পারেননি।
চোরবাগান সর্বজনীনের কর্মকর্তা জয়ন্ত মুখার্জি জানালেন “মাঠে এখন ভ্যাকসিন সেন্টার করা হয়েছে। অন্যান্যবার এই সময়ে পুজোপ্রস্তুতির কাজ অনেকটাই হয়ে যায়।” অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাবের কর্মকর্তা তমাল দত্তের কথায়, “আমাদের মহিলা বাহিনী পুজোতে যেমন কাজ করেন, এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। প্রবীণদের সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন দিতে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা থেকে সুন্দরবনে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, এটাই আমাদের এবারের পুজোর থিম।”
আরও পড়ুন: ‘ওনার দীর্ঘদিনের রোগ,’ মুকুলের ফুলবদলে নীরবতা ভাঙলেন শুভেন্দু
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম থেকেই পুজো ফোরামের তত্ত্বাবধানে পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা শিবির চালু করা হয়। একুশের দুর্গাপুজোয় কলকাতার বড় বড় ক্লাবের থিম এবার এমনই।