কলকাতা : দুদিন কেটে গেলেও এখনও থমথমে ভাঙড়। একদিকে, পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। অন্যদিকে, সংঘর্ষ সামাল দেওয়া গেলেও উত্তাপ বাড়ছে ভাঙড়ের মাটিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই অঞ্চলকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। এবার শাসক দলের সঙ্গে যেভাবে ISF-র সংঘাত চরমে উঠেছে, তার রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। গত শনিবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত নওশাদ সিদ্দিকি সহ ১৮ জনকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এই বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘুরাই সংখ্যাগুরু। ৬৫ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। তাই এই অঙ্কটা সব রাজনৈতিক দলই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। এতদিন পর্যন্ত সেখানে ছিল তৃণমূলের একচেটিয়া রাজত্ব। তবে বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খায় শাসক দল। ভোটের আগেই তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’। সেই দল থেকে ভাই নওশাদ সিদ্দিকিকে প্রার্থী করেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। জিতেও যান তিনি। বর্তমানে বিধানসভায় তিনিই আইএসএফের একমাত্র বিধায়ক।
এবার দেখা যাক, শনিবারের সংঘর্ষের পর কে কী বলছেন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, গুণ্ডামি মস্তানির দিন শেষ হয়ে এসেছে। ভাঙড়ে আইএসএফ-সিপিএম এত ক্ষমতা রাখে যে সব মস্তানি শেষ করে দিতে পারে। তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট সিদ্দিকিদের হাতে হাত রেখেছে বামেরা।
আর বিজেপি? সদ্য রাজ্যে এসে মিঠুন চক্রবর্তী বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে নয়। আর সাম্প্রতিক ঘটনার পর সাংসদ তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখেও নওশাদদের প্রচ্ছন্ন সমর্থনের কথাই শোনা গেল। তিনি বলেন, ‘আমি ওই এলাকাতেই থাকি। নওশাদ আমার বিধায়ক। আমার বাড়ির সামনেই ঘটেছে। আইএসএফ গণতান্ত্রিক দল। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে কেউ আটকাতে পারে না।’
তবে তৃণমূলের সুর এখনও চড়া। ‘ধর্মস্থানের আবেগকে ব্যবহার করে, যদি কেউ রাজনীতি করতে চান তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’, এমনই শোনা গিয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মুখে। তাঁর দাবি, তৃণমূলকে সরানোর জন্য সমানে একটা জায়গায় গণ্ডগোল করছে আইএসএফ।
এইসব চাপান-উতরের মাঝে প্রশ্ন একটাই, ভোটবাক্সে কী অঙ্ক থাকবে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। দেখতে দেখতেই চলে আসবে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নওশাদের পুলিশ হেফাজত কি সত্যিই খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে?