কলকাতা : বঙ্গ বিজেপির (West Bengal BJP) মধ্যে ক্রমেই বিদ্রোহের সুর জোরালো হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপির অন্দরে এমন ‘বিদ্রোহ’ দেখা যায়নি। পোস্টার, পাল্টা পোস্টারের পালা চলছে। জমে উঠছে চড়ুইভাতির রাজনীতি। আর এই সবের মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করলেন বিজেপি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার (Jay Prakash Majumdar) ও রীতেশ তিওয়ারি (Ritesh Tiwari)। একেবারে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে কার্যত তুলোধনা করলেন দুই নেতা। আক্রমণের অভিমুখ, বঙ্গ বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে রাজ্যের বাইরে থেকে আসা একাধিক নেতাও। আর এই সবের মধ্যেই জয়প্রকাশের কথায় বার কয়েক উঠে এল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রীর কথা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এসেছে জয়প্রকাশের গলায়, কিন্তু তখন ছিল আক্রমণের সুর। মঙ্গলবার সেটা কিন্তু বেমালুম উধাও, থাকলেও তা একেবারেই সুপ্ত। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তো কার্যত মেসির সঙ্গে তুলনা করে বসলেন জয়প্রকাশ। সেই সময় রাজ্য বিজেপির রণকৌশলের তুমুল সমালোচনা করছিলেন তিনি। মনের মধ্যে জমে থাকা একরাশ ক্ষোভ, অভিমান উগরে দিচ্ছিলেন সাংবাদিক বৈঠকে। ঠিক সেই সময়েই বাংলায় তৃণমূল ও বিজেপি তুল্যমূল্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জয়প্রকাশ বললেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসা অভিজ্ঞ নেত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপির যে দুই মুখকে রাখা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, যিনি মাত্র আড়াই বছর রাজনীতি করেছেন। তার পরেই যিনি রয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, যিনি মাত্র দু’বছর রাজনীতি করেছেন। এই দুই জন কার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন? যিনি বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম সেরা স্ট্র্যাটেজিস্ট। এ তো মেসির টিমের বিরুদ্ধে তিন দিনের অনুশীলনে খেলতে নামা প্লেয়ার।”
শুধু তাই নয়, বঙ্গ বিজেপি রণকৌশলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় আসার জন্য লড়াই করছিলেন, তখন তিনি হাইকোর্টের উপর নির্ভর করে লড়াই করেননি। তিনি মাঠে ময়দানে রাস্তায় নেমে লড়াই করেছিলেন। কারণ, সেটাই বাংলার রাজনীতি।” অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সেই চাঁচাছোলা আক্রমণের মেজাজটা মঙ্গলবার একেবারই ছিল না জয়প্রকাশের গলায়। বরং, মমতার রাজনৈতিক সমর কৌশলের একটি প্রচ্ছন্ন প্রশংসাই দেখা গেল বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতার গলায়। আর তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে এক জোর জল্পনা ছড়িয়েছিল তাঁর রাজনৈতিক গতিবিধি প্রসঙ্গে।
যদিও সংবাদ মাধ্যমের একাংশে বিক্ষুব্ধ নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি কোনও দলে যাচ্ছি না।” সঙ্গে তাঁর এও বক্তব্য, “আমি যে প্রশ্নগুলি করেছি দল সেগুলির জবাব দিক।” অর্থাৎ, তিনি যে বিজেপি ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছেন না, সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। বরং, দলের রাজ্য নেতৃত্বের উপর, বিশেষ করে সুকান্ত মজুমদারদেরই প্রতিই যে তাঁর ক্ষোভ, সেটাই বার বার বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন : West Bengal BJP : আড়াই বছরেই সভাপতি! সুকান্তের উত্থান নিয়ে তোপ ‘অভিজ্ঞ’ জয়প্রকাশদের