দশ দফা দাবি নিয়ে লাগাতার অনশন-আন্দোলন-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। শনিবার তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনই মমতা জানিয়েছিলেন সোমবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে নবান্নে আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। সেই মতো আজ বিকেল চারটে কুড়ি নাগাদ ধর্মতলা থেকে সতেরো জন ডাক্তার বাসে চড়ে রওনা দেন নবান্নের উদ্দেশ্যে। তবে কি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের জট আজ মিটবে? সরাসরি নজর থাকবে সেদিকে
দেবাশিস হালদার কী জানালেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আপনারা বন্ধুতের বন্ধন সুদৃঢ় করুন। তোমারদের কাছে কোনওদিন আমাদের যেতে হতে পারে, তখন যদি চিকিৎসা না দাও কী করব?
মুখ্যমন্ত্রী: আগে তোমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করো। তারপর আলোচনা করা আমরা ব্যবস্থা নেব।
জুনিয়র ডাক্তার: আগামী প্রজন্ম যেন সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সেই কারণে আন্দোলন-অনশন। আপনার অনশন-আন্দোলন দেখেই আমাদের শেখা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: স্টেট টাস্ক ফোর্সের কোনও পরিকাঠামো বা কে-কারা আছেন , কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন সেগুলো আমরা জানি না
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজ্য সরকারের ৩ জন আর আপনাদের ১০ জন ?
অনিকেত মাহাতো: জুনিয়র চিকিৎসক ছিল না বলে স্বাস্থ্যসচিব বলছেন, সাগর দত্তে রোগী মারা গিয়েছিল!
দেবাশিস হালদার: স্টেট লেভেল টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি কলেজ লেভেল টাস্ক ফোর্স করা হোক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – আগে তোমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করো। তারপর আলোচনা করা আমরা ব্যবস্থা নেব। সব দাবি করলে পাওয়া যাবে না কি ?
মুখ্যসচিব: মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরীক্ষার দিন মাথায় রেখেই এই সময় নির্ধারিত। রিক্রুটমেন্ট নিয়ে আমরাও চাইছি, যাতে কোনও শূণ্যপদ থাকে, সেদিকে নজর রাখছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: কিছু অধ্যক্ষ, এমএসভিপি রাজনৈতিক রোল প্লে করেন। ডায়মন্ডহারবারের কেসের মত কেস আরও অনেক জায়গায় হয়েছে। নর্থ বেঙ্গলে অধ্যক্ষ, আমার দলের মেয়রকেও ঘেরাও করা হয়েছিল। সেখানে একজন ডাক্তারকে স্পটেই রেজিগনেশন করানো হয়েছিল।আমি টিভিতে দেখেছি। এটা থ্রেট কালচার নয়?
অনিকেত মাহাতো: থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত ৫৯ জনের মধ্যে অনেকে ১০০’য় ১০ পাওয়ার যোগ্য নয়, গোল্ড মেডেল পেয়েছে। রাগ করবেন না, ক্ষুব্ধ হবেন না। অনিকেত মাহাতো: আরজি কর-সাগর দত্ত এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে যাঁরা ভর্তি হয়েছে তাঁদের এমন কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাঁরা নটোরিয়াস ক্রিমিন্যাল
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়: এটা নিয়ে তদন্ত করা হবে। মানসিক দৃঢতা , সুস্বাস্থ্য ফিরে আসে সেটা আপনারা ভাবুন।নিয়োগ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আমি একমত। কেউ কেউ গিয়ে একটা পিআইএল করে দেয়। এটা আমাদের হাতে তখন থাকে না। আমরা রোজ চেষ্টা করছি। সুপ্রিম কোর্টে ওবিসি বিষয়টা আটকে রয়েছে এ তোমরাও বলতে পারো। তোমাদেরও তো আদালতে যেতে হচ্ছে! তোমরা বলো
সমস্যার সমাধান করতে গেলে অভিযোগ , পাল্টা অভিযোগ না করা
যেটা আদালতে রয়েছে । তোমাদের আইনজীবী বলেছেন হাসপাতালে তুলো ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না! আমাদের কতটা মুখ পুড়ল বলো তো?
সবার সামনে গোটা ভারত তো শুনল এ রাজ্যে তুলো ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না
ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল statutory বডি। আমরা পরিবর্তন করতে পারি না
আমি কিন্তু ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। আমি মুখ্যসচিব- স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠিয়েছিলাম। আমি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তোমাদের খোঁজ নিই।
তোমরা অনশন/ ধর্মঘট তুলে নাও
আবার তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে অনশন তুলে ধর্মঘট তুলে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে ফেরো
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: তোমাদের দোষ দেব না। হয়ত আমাদের কোনও ত্রুটি ছিল।সেই কারণে হয়ত তোমাদের এই জায়গায় আসতে হয়েছে।
আর জি করের অধ্যক্ষকে মুখ্যমন্ত্রী – আপনি তো ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করেছেন। আমাদের না জানিয়ে করেছেন।কার কী অপরাধ এনকোয়ারি কমিটি সেটা বিবেচনা করে দেখব। সরকারের ২ কোটি টাকা খরচ হ্য় একটা চিকিৎসক তৈরি করতে।আপনাদের কাছে অভি্যোগ দিলে সেটা আপনি কথা বলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন।থ্রেট কালচার চলবে না।
মুখ্যমন্ত্রীকে থামিয়ে অনিকেত মাহাতো…
অনিকেত মাহাতো: যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁরা নটোরিয়াস ক্রিমিন্যাল। আগের অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকতে গেলে দু ঘণ্টা দাঁড়িযে থাকতে হত। আমি ক্রিমিনালের পক্ষে থাকব ? ধর্ষকদের পক্ষে থাকব ?
অনিকেত মাহাতো: আমার ক্যাম্পাসে আমাদের অভিভাবক কে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি তোমাদের দাবি অনাহ্য বলছি না
মুখ্যমন্ত্রী: সেন্ট্রাল সরকারের কোনো এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে
অনিকেত মাহাতো: আপনি যাঁদের কথা বলেছেন তাঁরা চিকিৎসক হওয়ার যোগ্য নয় । তাঁরা চিকিৎসক হয়ে গিয়েছে
মুখ্যসচিব– অনেকবার আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাজ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আছে।
আজকের চিকিৎসক ভাই-বোনদের বক্তব্য নিয়ে আগেও কথা হয়েছে । একটা ইমেল আইডি দেওয়া হয়েছে । কারও কোনও অভিযোগ থাকলে ইমেল করতে পারেন। এটা জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মতো করা হয়েছে
মুখ্যসচিব – ফোনে কথা হয়েছিল শনিবার। সেগুলোই আজ সামনাসামনি বলেছেন। আমরা জানিয়েছিলাম মার্চ ২০২৫ র মধ্যে কাউন্সিলের নির্বাচন হবে। নির্বাচন হয়ে গেলে আপনাদের যে প্রতিনিধি থাকার কথা বলছেন সেটা হয়ে যাবে বলে আমাদের মনে হয়। আমরা অনেকটাই আপনাদের দাবিমতো এগিয়ে গিয়েছি। কমিটি গুলোর যে যে দাবি রয়েছে সেগুলো ক্রস চেক করে আপনাদের দিয়ে দেব
মুখ্যমন্ত্রী: কেউ কেউ ইচ্ছে মতো কাউন্সিল তৈরি করে নিচ্ছে। নিজস্ব একটা আইন আছে।নিয়োগের ক্ষেত্রে ওবিসি কে বাদ দিয়ে করা যায় না।তদন্তের ক্ষেত্রে আমাদের তরফ থেকে যা যা দেওয়া তা দেওয়া হয়ে গিয়েছে । তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট নিজে নজর রেখে চলেছে।
চিকিৎসক আসফাকুল্লা: আমাদের কাছে খবর চিকিৎসকদেরকে দিয়ে রেফারেলের কাগজের কাজ করানো হচ্ছে
মুখ্যমন্ত্রী– আমি তোমাদের সঙ্গে একমত । কিছু অধ্যক্ষ ঠিকমতো কাজ করেন না। কয়েকজন অধ্যক্ষ রাজনৈতিক রোল পালন করে। চেয়ার সারাজীবন এক থাকে না।কিছু অধ্যক্ষ রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করেন। ডায়মন্ড হারবারের কথা আপনারা তুললেন। এর আগেও ঘটেছে। আপনাদের আন্দোলনের সময়ই উত্তরবঙ্গে ঘটেছে।আমি কিঞ্জলের সঙ্গে একমত। উত্তরবঙ্গে একজন চিকিৎসককে চাপ দিয়ে সেখানেই পদত্যাগ করানো হল, এটা থ্রেট কালচার নয়?
মুখ্যমন্ত্রী: আমাদের সময়ে শয্যা সংখ্যা বেড়েছে। কাজের চাপ বেড়েছে। কোয়ালিটি অফ হেলথ কে্যার সারা ভারতের মধ্যে মনে হ্য় আমাদের রাজ্যে সব থেকে ভাল হ্য়
অগ্নিবীণ কুণ্ডু: স্বাস্থ্য সচিবের সম্বন্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। আপনি কাগজ চেয়েছিলেন। বেশ কিছু কাগজ স্যারের হাত থেকে বেরিয়েছে। সেই কারণে অপসারণের কথা বলেছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : একটা মানুষের অভিযোগ প্রমাণের আগে তাঁকে অভিযুক্ত বলা যায় না। তুমি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারো।
কিঞ্জল নন্দ: স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নই।
অনিকেত মাহাতো: আমি আরজি করে আমি পড়াশোনা করি। ১৪ই অগস্টের পর কীভাবে একটা অপরাধমূলক প্রবণতা ক্যাম্পাসের ভিতরে কাজ করছিল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের স্যর আসে। তদন্তমূলক কমিটি যে তৈরি হয়েছিল, রিপোর্ট যখন আসে, আন্দোলন করতে গিয়ে যন্ত্রণা দেখেছি। একটা কমিটি দিয়ে বা গ্রিভেন্স সেল দিয়ে এই যন্ত্রণা বলা যায় না। যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে, টাকা আদায়, চাঁদা আদায় সেই পরিবেশটুকুও কলেজ ক্যাম্পাসে ছিল না। একটা মেয়ের উপর যদি কোনও ঘটনা ঘটে, সে কোথায় গিয়ে বলবে? কেন আমরা এতগুলো কমিটি চাইছি, কেন প্রতিনিধিত্ব চাইছি সেটা পরিষ্কার হবে। আন্দোলন চলার পরও দেখুন ঔদ্ধত্য কোথায়? ম্যাডাম দেখবেন দ্বিতীয় অভয়া না হয়। আমরা যা চাইছি তাতে হাতি- ঘোড়া হবে না হযত ! অভিযোগকারীকেই বলছে তুমিই র্যাগিং করেছ।ন্যূনতম বিচারও পাইনি।
হীমাদ্রি শেখর বেরা (ট্রপিক্যাল): আমাদের প্রথম দাবি নিহত খুনের চিকিৎসকের ন্যায় বিচার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব পেপার্স দিয়ে দিয়েছি। আমরাও চাই এটা তাড়াতাড়ি হোক
চিকিৎসক আসফাকুল্লার: আরজি করের ট্রমা কেয়ারে সিলড প্যাকেটে রক্তমাখা গ্লাভস উদ্ধারের প্রসঙ্গ
কিঞ্জল নন্দ: থ্রেট কালচার নিয়ে কথা বলেছি। আজও ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের থ্রেট কালচারের প্রধান নাম সে গিয়ে অধ্যক্ষের ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে এসেছে। ১৪ অগস্ট আরজি করে যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: এটা নতুন দাবি
দেবাশিস: আমাদের নতুন কোনও দাবি নেই। আগের দাবিগুলোই পয়েন্ট আকারে বলা হয়েছে।
যেগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে বলা হচ্ছে আগে সেগুলো আমরা বলে নিচ্ছি। তারপরে কোন জায়গাগুলো মানা সম্ভব হচ্ছে না সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব
স্টেট টাস্ক ফোর্সের এসওপি। প্রতি মাসে বৈঠক চাইছি
কলেজ স্তরে মনিটরিং কমিটিতে ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধি
নির্বাচন এখনই হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী প্রতিনিধিত্ব
আমরা চাই না ভবিষ্যতের বিরূপাক্ষ তৈরি হোক।
মমতা: যে উপস্থিত নেই, তার নামে বলা উচিত নয়। তোমরা তোমাদের কথা বলতে পারো। যে উপস্থিত নেই তাঁকে তাঁর কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
দেবাশিস: কিন্তু আমাদের তাঁদের নামে অভিযোগ আছে। যখন অভিযোগ জানাব বলতে পারব?
মমতা: অভিযোগ তো সবার বিরুদ্ধেই আছে। তুমি তোমার কথা গুলো বলো
মমতা: আপনারা শুরু করুন। আপনারা আশাকরি দাবির সংখ্যা বাড়াবেন না
জুনিয়র ডাক্তার আশফাকুল নাইয়া: মানসিক দৃঢ়তার জায়গা থেকে আমাদের সহকর্মীরা লড়াই করে যাচ্ছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: কোন কোন অর্গানাইজেশন থেকে বলেছেন সেটা জানাবেন
দেবাশিস হালদার: একটাই অর্গানাইজেশন। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট