কলকাতা: রাজ্য শাসক দলকে কার্যত নজিরবিহীন তুলোধনা কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay)। তৃণমূলের প্রতীক প্রত্যাহার করানোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি। শুক্রবার নিজের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বলেন, গণতন্ত্র সঠিক লোকের হাতে নেই। সেই প্রসঙ্গেই তৃণমূলের প্রতীক প্রত্যাহারের বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে বলার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। যদিও গোটা বিষয়টি বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এই নিয়ে কোনও নির্দেশ তিনি দেননি। এদিন আদালতে সুপার নিউমেরারি পদ নিয়ে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, কেন অতিরিক্ত খরচ করবে রাজ্য?
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কেন রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নেবে? রাজ্য সরকার কি এই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করবে? এরপরই তিনি বলেন, তাঁর ক্ষমতা রয়েছে। তিনি ভাবছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি লিখে তৃণমূলের কংগ্রেসের প্রতীক প্রত্যাহার করার জন্য বলবেন। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের দলের মান্যতা আদৌ আছে কি না, সেই বিষয়টিও তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাইতে পারেন। যদিও গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণের পর্যায়েই রয়েছে।
প্রসঙ্গত আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন। যে কোনও দলের সম্পর্কে অভিযোগ করা যেতে পারে। অতীতে নির্বাচন কমিশনের এমন তোপের মুখে অনেক সংগঠনই পড়েছিল। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দলের প্রতীক কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। এই গোটা বিষয়টি নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের উপর। কমিশন একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থা। অতীতে এমন ধরনের বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও, শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপরেই ছেড়ে দিয়েছিল।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “একজন বিচারপতি যা খুশি মন্তব্য করতে পারেন না। হাইকোর্টের একজন বিচারপতির থেকে এই ধরনের মন্তব্য কাম্য নয়। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস কোথা থেকে আসছে? তৃণমূল এত দুর্বল নয়, যে যদি এই ধরনের পর্যবেক্ষণ হতে থাকে, তাহলে তাতে ঘাবড়ে যাবে। যদি কোনও লিখিত নির্দেশ হয়, তাহলে আইনি পদ্ধতিতে তৃণমূল লড়াই করবে।”
সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের আরও সংযোজন, “একজন বিচারপতির মৌখিক কথার কোনও মান্যতা নেই। ওনার যদি বিচারবিভাগীয় সিদ্ধান্ত সেই জায়গায় হত, তাহলে ওনার সেই সাহস দেখানো উচিত ছিল কথাটি লিখে দেওয়ার। তারপর বাকিটা দেখতাম আমরা। মামলার মধ্যে এই বিষয়গুলি নেই। মামলার মধ্যে যদি কথাগুলি না থাকে, তাহলে কোনও বিচারপতির নৈতিকতার মধ্যে থাকে না কথাগুলি বলার।” অতীতে সুপ্রিম কোর্টের এক পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরে কল্যাণবাবু বলেন, “বিচারক-বিচারপতিদেরও শৃঙ্খলা ও আইনের মধ্যে থাকতে হবে।”