কলকাতা: মঙ্গলবার বিধান নগর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিডিয়ো কার্যত বিতর্ক তৈরি করে। তাঁর স্ত্রী-র সঙ্গে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন জয়ব্রত। ওই ভিডিয়োয় অভিযোগের সুরে বারবার বলেছেন, তাঁর সামনেই মন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করতেন নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ব্রত আরও বলেন, “বারবার আমার স্ত্রী বলতো, বালুদা জগিং করে, কত ইয়ং, খালি ওনার প্রশংসা।” শুধু তাই নয়, অসুস্থতা নিয়ে এসএসকেএম-এ জ্যোতিপ্রিয়র ভর্তি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী। বলেছেন, “জ্যোতিদা কিন্তু সুস্থ লোক। কোনও দিনই অসুস্থ ছিলেন না। এখন কীভাবে অসুস্থ হয়ে গেলেন জানি না।” জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে নিজের সম্পর্ক এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণটাই ব্যক্তিগত বলে উড়িয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর নন্দিনী। তিনি জানান, তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা আদালতে বিচারাধীন। এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ নন্দিনী।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জয়ব্রত। তাঁর কথায়, “জ্যোতিপ্রিয়র খুবই খেয়াল রাখতেন তাঁর স্ত্রী। বালুদা বলতে অজ্ঞান। তার জন্য মুড়ি মেখে নিয়ে যচ্ছে, রান্না করে নিয়ে যাচ্ছে। ফল নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমার জন্য কোনও দিনই করেনি। আমি সকালে একটু ভাত খেয়েই অফিস চলে যাচ্ছি।” শুধু তাই নয়, জয়ব্রত এ-ও বলেছেন, তাঁর হার্ট অ্যাটাকের পর যখন তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন সেই সময় নাকি নন্দিনী ভট্টাচার্য দার্জিলিংয়েও ঘুরে এসেছেন জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে।
কবে থেকে জ্যোতি-নন্দিনীর সম্পর্ক?
কাউন্সিলরের স্বামীর দাবি, “আমার হার্ট অ্যাটাকের পর থেকে তো হতে পারে না। ওদের সম্পর্ক নিশ্চয়ই আগে থেকে চলছে। আমি নিজে দেখেছি ওদের ফোন আসত। আন্দাজ করেছি কিন্তু বুঝতে পারিনি বালুদার জন্য আমার উপর এমন অত্যাচার করবে।”
কীভাবে জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে যোগাযোগ হয় নন্দিনীর?
এই উত্তর দিতে গিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী বলেছেন, “মতিঝিলে থাকাকালীন ববি বলে একজন থাকত। সে পুরসভায় ব্লিচিং সাপ্লাই করত। উনি প্রথম বালুদার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। বারবার ববি বলত বালুদা ডাকছে। আমি পছন্দ করিনি।”
কবে থেকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি?
জয়ব্রত বলেছেন, “২০২১ এ কাউন্সিলরের টিকিট পায়। এরপর থেকেই হাবভাব বদলে যায়। আমায় সোজা বলল ফ্ল্যাটে না আসতে। এ দিকে ও রাত এগারোটা, সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাড়ি ঢুকেছে। কোনও সময় জ্ঞান নেই। ফোনেও ব্যস্ত।”
প্রসঙ্গত, স্বামী জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন কাউন্সিলর নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর থেকেই ওই ব্যক্তির দাবি তাঁকে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। বারবার পুলিশ তাঁকে ফোন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এরপরই কেঁদে তিনি বলেন, “আমি হার্টের রোগী। এই অবস্থায় হেনস্থা মেনে নিতে পারছি না। আমি আর বাঁচতে চাই না।”
নন্দিনী যদিও স্বীকার করেছেন, জয়ব্রতর বিরুদ্ধে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সঙ্গে এও বলেছেন, “জয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। আর ওনার ভুলভাল ভিডিয়োর বিরুদ্ধেও আমি আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। একজন মহিলাকে অসম্মান করেছেন উনি।”
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য Tv9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। মন্ত্রী সুজিত বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ওই এলাকার নন, তাই তিনি কিছু জানেন না। অপরদিকে, জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল তবে প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বিধায়ক তাপস রায় বলেছেন যে, রাজনৈতিকভাবে লড়তে না পেরে এই রকম ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতেও তাঁর রুচিতে বাধে।