কলকাতা: চারতলা হস্টেল। তার বারান্দার রেলিংয়ের উপরিতল ধরুন মেরে কেটে ১০ ইঞ্চি চওড়া হবে। তিন তলার সেই রেলিং দিয়েই নাকি হাঁটতে বলা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে। শুধু তাই নয়, সিনিয়র দাদাদের ‘আবদার’ ছিল বিবস্ত্র অবস্থাতেই হাঁটতে হবে ওই নাবালককে। অভিযোগ, উঠছে তেমনটাই।
এখন প্রশ্ন হল তিন তলার উপরের এই সরু রেলিং দিয়ে হাঁটা সম্ভব? নিচে ধরুন ২০ থেকে ২২ ফুটের মতো খাদ। উপর থেকে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত। হয়ত বা গুরুতর আহত হতে পারে। এই সব জেনেও সিনিয়র দাদারা নিছকই মজা নেওয়ার জন্য গ্রাম থেকে আসা সাদাসিধে ছেলেটিকে হাঁটতে বাধ্য করেছিল ওই সরু রেলিং দিয়ে। তাও আবার বিবস্ত্র অবস্থায়। তখন ওই ছেলেটির মানসিক পরিস্থিতি কী ছিল তা জানা বা বোঝার চেষ্টা করেননি ‘সিনিয়র দাদারা’। পুলিশ সূত্রে এমন তথ্য আসার পর শিহরিত হচ্ছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে এটা কি আদৌ র্যাগিং নাকি পোশাকি ভাষায় র্যাগিংয়ের নামে খুন করা হল ওই জলজ্যান্ত ছেলেকে?
রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী চট্টোপাধ্যায় ইতিমদ্যে সেই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন।তিনি বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তো কিছু বলা যায় না। আমার তো মনে হল অত দূরে ছেলেটা কী করে পড়ল? বারান্দা থেকে বেশ খানিকটা দূরে পড়েছে। কী করে পড়ল?”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাত্রি ৯টা থেকে শুরু হয় র্যাগিং। ৯টা ৪০ নাগাদ চিঠিতে সই করতে জোর করার অভিযোগ ওঠে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে। এরপর রাত সাড়ে ১০টা বাড়িতে ফোন করে ওই পড়ুয়া। রাত ১০টা ৪৩ মিনিট নাগাদ ডিনের কাছে ফোন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক পড়ুয়ার। এরপর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বিবস্ত্র করে পাঁচিলে হাঁটতে বাধ্য করা হয় পড়ুয়াকে বলে অভিযোগ। ১১টা ৪৫ নাগাদ পাঁচিল থেকে পড়ে যায় সে। রাত ১১টা ৫৩মিনিট নাগাদ যাদবপুরের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের কাছে পৌঁছয় খবর। রাত ১২টা ০৫ নাগাদ ট্যাক্সিতে বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছয় গুরুতর আহত পড়ুয়া। আর ভোর ৪টে মৃত্যু হয় তাঁর। এই ছিল ঘটনার দিনের প্রেক্ষাপট।
ছাত্রমৃত্যুর চারদিন পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। মৃত পড়ুয়াকে ‘সন্তানসম’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেখানেই প্রশ্ন উঠছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সন্তানসম পড়ুয়াদের আদৌ কি কোনও নিরাপত্তা ছিল? সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা তৈরি হয়েছে যাদবপুরে। কার্যত অরক্ষিত যাদবপুরে এমন আর ক’জনের প্রাণ গেলে ঘুম ভাঙবে কর্তৃপক্ষের? সেই প্রশ্নের উত্তর মেলার অপেক্ষায় দিন গুনছেন ‘আতঙ্কিত অভিভাবকরা’