কলকাতা: বাড়ির ছাদে তিন বন্ধু মিলে গল্প করছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে মাঝেমধ্যে আগেও আড্ডা মেরেছেন। পরিবারের সদস্যরাও সেকথা জানতেন। কিন্তু আচমকাই একটা ঝুপ করে শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন বাড়ির লোক। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই গোঙানির শব্দ। পরিবারের সদস্যরা ছাদে ওঠার আগেই বাকি দুই যুবকের চিৎকার শুনতে পান। ছাদে উঠে দেখেন, পাশের বাড়ি পড়ে রয়েছেন তাঁদেরই ছেলে। মাথা থেঁতলে গিয়েছে। মাটিতে চাপ চাপ রক্ত। তখন প্রাণ ছিল শরীরে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই যুবক লড়াই জারি রেখেছিলেন আর এক দিন। কিন্তু কীভাবে ছাদ থেকে পাশের বাড়িতে পড়ে গেলেন যুবক? বেহালার সেনাটি ঝিলের চণ্ডীতলা ব্রাঞ্চ রোডের যুবক কুশল চক্রবর্তীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বেহালা থানার পুলিশ।
পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার রাত তখন ১১ টা হবে। কুশল, তাঁর ভাই যান বন্ধু বিতান সেনের বাড়িতে। তাঁরা তিন জনই পুরনো বন্ধু। একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ওঠাবসা করেন। তাই বাড়ির লোক তাতে আপত্তি জানাননি। পরিবারের দাবি, ঘটনার পর তাঁরা যখন ছাদে গিয়েছিলেন, মদের বোতল পড়ে থাকতে দেখেন। তাই তাঁদের অনুমান, তিন জনে ছাদে মদ খাচ্ছিলেন।
জানা যাচ্ছে, বিতানের বাড়ির ছাদে রেলিংয়ের ধারেই বসে গল্প করছিলেন কুশল। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাইও। বিতানের বাড়ির সদস্যরা জানাচ্ছেন, আচমকাই তাঁরা শব্দ শুনতে পান, তারপর চিৎকার চেঁচামেচি। তাঁরা যতক্ষণে ওপরে আসেন, দেখেন কুশল পাশের বাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।
বিতানের বাবা প্রদীপ সেনই কুশলকে উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায়, এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় কুশলের।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জেরেই মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পরে হাসপাতালের তরফে বেহালা থানার পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন বেহালা থানার পুলিশ আধিকারিকরা। কীভাবে কুশল ছাদ থেকে পড়ে গেলেন, কেউ তাঁকে ধাক্কা মেরেছিলেন কিনা,সে সব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ মনে করছে, তিন জনের মধ্যে বচসাও হয়ে থাকতে পারে। মদ্যপ অবস্থায় ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন কুশল। পুরো বিষয়টাই বেহালা থানার পুলিশ তদন্ত করছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বিতান সেনকে। বিতানের পরিবারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। বাড়ির ছেলেকে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ কুশলেরও পরিবার। তাঁরা লিখিত অভিযোগ জানাবেন কিনা, সেটা পরে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা তো কিছুই জানতাম না। ভোর রাতে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনি। ওদের তিন জনকে মাঝেমধ্যেই একসঙ্গে দেখা যেত।”