সল্টলেকের অভিজাত ব্যবসায়ীর নিখোঁজ ছেলের খোঁজে বাড়ির ছাদেই মিলল কঙ্কাল

পুলিস এজে ব্লকের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তিনতলার উপরের ছাদ থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা যান। তাঁদের কথায়, ‘’বাড়ির নীচের তলায় একটি ঘরে পোড়া দাগ পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ কিছু পোড়ানো হয়েছে এমন দাগ। ছাদের উপর পাওয়া গিয়েছে কঙ্কালটি।”

সল্টলেকের অভিজাত ব্যবসায়ীর নিখোঁজ ছেলের খোঁজে বাড়ির ছাদেই মিলল কঙ্কাল
সল্টলেকের বাড়ির দরজা ভাঙছে পুলিস। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Dec 10, 2020 | 11:59 PM

কলকাতা: নিখোঁজ ছেলেকে খুঁজে পেতে থানার দারস্থ হয়েছিলেন বাবা। প্রাথমিক তদন্তেই অবাক পুলিস, বাড়ির ছাদেই পড়ে রয়েছে কঙ্কাল। ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের এজে ব্লকে (A G Block)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, ছাদে পাওয়া কঙ্কালটি নিখোজ অর্জুন মাহেনসারিয়া (২৫)-র। পারিবারিক বিবাদের জেরে পরিবারের সদস্যদের হাতেই খুন হয়েছে অর্জুনকে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন অর্জুনের মা গীতাও। আজ গীতা মাহেনসরিয়াকে আটক করে বিধাননগর পুলিস (Bidhannagar Police) ।

পুলিস সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার সকালে। অনিল মাহেনসরিয়া নামক এক ব্যবসায়ী বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ জানান যে তাঁর বড় ছেলে অর্জুন নিখোঁজ। পুলিসকে তিনি জানান, তাঁর সন্দেহ স্ত্রী গীতাই বড় ছেলেকে অপহরণ (Kidnap) করে খুন করেছে। অনিলের বয়ানের ভিত্তিতে এদিন বিকেলে সল্টলেকের এজে ব্লকের ২২৬ নম্বর বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিস। তল্লাশির সময়েই বাড়ির ছাদে মেলে এক পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রায় কঙ্কাল হয়ে যাওয়া পচা গলা দেহ। পড়শিদের দাবি, ২ মাস ধরে তালাবন্ধ ওই বাড়ি।

অভিযোগকারী অনিলকে জেরা করে পুলিস জানতে পারে, বাড়িটি তাঁর স্ত্রী গীতা মাহেনসারিয়ার। ১৯৮৮ সালে গীতার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে অর্জুন (২৫)। বাকি দুই সন্তান বিদুর (২২) এবং বৈদেহী (২০)। সম্প্রতি ওই দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্যের জেরে অনিল রাজারহাটের একটি আবাসনে একা থাকতেন। সল্টলেকের বাড়িতে থাকতেন স্ত্রী গীতা এবং তাঁদের তিন সন্তান। অনিল পুলিসকে জানান, অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ তিনি জানতে পারেন যে গীতা তিন সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি রাঁচী (Ranchi)-তে চলে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন: কোভিড পরিকাঠামোয় কাটছাঁট, বেসরকারি হাসপাতালকে শয্যা ফেরানোর নির্দেশিকা স্বাস্থ্য দফতরের

অনিল পুলিসকে জানান, পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে রাঁচীতে গীতার সঙ্গে বৈদেহী এবং বিদুর থাকলেও অর্জুন নেই। যদিও গীতা ফোনে অনিলকে জানিয়েছিলেন যে অর্জুনও তাঁদের সঙ্গেই আছেন। এরপরেই তাঁর সন্দেহ হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় অর্জুনের খোঁজ করেও কোনও হদিশ না পেয়ে তিনি পুলিসের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস সূত্রে খবর, গীতা রাঁচী গেলেও কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতায় ফিরে আসেন।

পুলিস অনিলের কথাতেই এজে ব্লকের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তিনতলার উপরের ছাদ থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ (Forensic Experts)-রা যান। তাঁদের কথায়, ‘’বাড়ির নীচের তলায় একটি ঘরে পোড়া দাগ পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ কিছু পোড়ানো হয়েছে এমন দাগ। ছাদের উপর পাওয়া গিয়েছে কঙ্কালটি।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের সন্দেহ, ওই কঙ্কালটিই নিখোঁজ অর্জুনের। তবে ময়নাতদন্তের আগে কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা স্পষ্ট হবে না। বিধাননগর পুলিসের গোয়েন্দাবিভাগের কর্তারা গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। খোঁজ চলছে অর্জুনের মা গীতা এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের।

তবে একটি বিষয় অবাক পুলিসকর্তারা। মৃতদেহটি ওই বাড়িতে পচে কঙ্কাল হয়ে গেল, কিন্তু পড়শিরা কোনও গন্ধ পেলেন না কেন? সেই সঙ্গে বাড়ির একতলার ঘরে পোড়া দাগও সন্দেহ বাড়িয়ে তুলেছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ঘরে হোম বা যজ্ঞ করলে যে রকম পোড়া দাগ তৈরি হয়, এই দাগটি অনেকটা সেইরকম। বিধাননগর পুলিসের এক কর্তা বলেন, গীতা এবং বাকিদের জেরা না করা পর্যন্ত স্পষ্ট হবে না গোটা ঘটনা।

আরও পড়ুন: মুখ্যসচিব ও ডিজিপির সঙ্গে বৈঠকের ফল “দুর্ভাগ্যজনক”, বললেন রাজ্যপাল