কলকাতা: কলকাতা পুরসভার (Kasba Fake Vaccination Camp) ভিজিল্যান্স অফিসার সেজে ভেজাল পেট্রোল বাজেয়াপ্ত করতে অভিযান চালিয়েছিলেন দেবাঞ্জন দেব (Debanjan Deb)। পুলিশের দাবি, জেরায় এ কথা কবুল করেছেন ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন। সেই অভিযানের ছবি একটি বাংলা দৈনিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়। ছবির তলায় তাঁর নামও লেখা ছিল।
তবে তদন্তকারীদের কাছে ধন্দ, আদৌ ওই সংবাদপত্রের কাটিংটি আসল কিনা? নাকি সেটি জাল করেছিলেন দেবাঞ্জন? নিজের ভুয়ো পরিচয় আড়াল করতেই কি মিথ্যা করে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত করে ছাপিয়েছিলেন তিনি? তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কসবার অফিসে তল্লাশি চালানোর সময়ে পেপার-কাটিংটি উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। তা দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয় দেবাঞ্জনকে। অভিযান চালানোর বিষয়টি জেরায় স্বীকার করে নেন তিনি। মূলত নিজের ভুয়ো পদের ক্ষমতা জাহির করতেই এই অভিযান বলে জানিয়েছেন তিনি।
তদন্তে পুলিশ আরও জেনেছে, নিজের অফিসে কলকাতা পুরসভার এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের ব্যানারে কর্মী সংগঠনের নির্বাচন করিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। সেই নির্বাচনে তিনি একাই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন ও জেতেন। নির্বাচন করতে পুরসভার লোগোও জাল করেছিলেন তিনি।
তদন্ত যত এগোচ্ছে, তত দেবাঞ্জন দেবের একের পর এক জালিয়াতি সামনে আসছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, মাসে ৭৭ হাজার টাকা বেতন দেখিয়ে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অফিসারের জাল স্যালারি স্লিপ তৈরি করেন দেবাঞ্জন। সেই জাল স্যালারি স্লিপ দেখিয়ে বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ২০ লক্ষ টাকা পার্সোনাল লোন নিলেও পরে তা শোধ করেননি। কসবায় আইএএস অফিসার, পুরকর্তা পরিচয়ে জাল নথি দেখিয়ে অফিস ভাড়া নেন দেবাঞ্জন। ৩ বছরের জন্য পুরসভার অফিসের কথা বলে মাসে ৬৫ হাজার টাকা ভাড়ায় বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তি করেন।
সোমবারই দেবাঞ্জন দেবের দুই সহযোগী কাঞ্চন ও শরৎ পাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, কাঞ্চন দেবাঞ্জনের দূর সম্পর্কের দাদা হন। তিনি অফিসের যাবতীয় জিনিসপত্রের দেখাশোনা করতেন। ত শরৎ পাত্র একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনিই টিকা দিতেন। অ্যামিকাসের ইঞ্জেকশন, যেটি কোভিশিল্ড বলে চালানো হয়েছিল, সেই ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন শরৎ পাত্র।
আরও পড়ুন: গত বছরই ধরা পড়ে যাচ্ছিলেন, পার পান কোনওক্রমে! বাবা-মাকেও কী কী মিথ্যা বলেছেন দেবাঞ্জন?
দেবাঞ্জন দেব একাই নন, এর আগে গ্রেফতার হওয়ায় তাঁর ৩ সঙ্গীর বিরুদ্ধেও রুজু হয়েছে খুনের চেষ্টার মামলা। কোভিশিল্ডের নামে অ্যামিকাসিন দেওয়া হচ্ছিল বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। সুস্থ মানুষকে এই অ্যান্টি বায়োটিক দিলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে। দেবাঞ্জন, কাঞ্চন ও শরৎকে আজকে আলিপুর আদালতে পেশা করা হবে। এরপর তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চান তদন্তকারীরা।