কলকাতা: অশান্তির আবহেই শেষ হলো কলকাতার পুরভোট। ঝরে রক্ত। শিয়ালদায় বোমাবাজিতে আহত হন তিন জন। পঁয়তাল্লিশ নম্বর ওয়ার্ডে, বুথের ভিতরেই বেঁধে যায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র হাতাহাতি। অশান্তির খণ্ডচিত্র দিনভর ধরা থাকে ক্যামেরায়। কিন্তু শাসকদলের কথায় ভোট হল ‘অবাধ শান্তিপূর্ণ’। সোমবারের ‘জাগো বাংলা’য় প্রকাশিত হল এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও।
রবিবার পুরভোটকে কেন্দ্র করে দিনভর তপ্ত থাকে শহরের আনাচ কানাচ। বোমাবাজি, হাতাহাতিতে একাধিক ওয়ার্ডের নাম উঠে আসে খবরে। ইভিএম ভাংচুর থেকে গা-জোয়ারি। শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রায় সর্বত্রই ভোটে অনিয়মের অভিযোগে সরব হন বিরোধীরা। পুলিশ গ্রেফতারও করে বেশ কয়েকজনকে। যদিও, তা মানছে না ঘাসফুল শিবির।
পাল্টা জাগো বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে রামধনু জোটে তত্ত্ব খাঁড়া করা হয়েছে। আর কলকাতায় ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ ভোট করিয়ে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হয়েছে পুলিশ। জাগো বাংলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেই ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কথা। ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটে অনিয়মের অভিযোগে রবিবার প্রথমে রাস্তায় বসে পড়েন বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা। কিছুক্ষণ পর বড়তলা থানার সামনে বিক্ষোভে যোগ দেয় বিজেপিও।
জাগো বাংলায় এই প্রতিবাদের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। বলা হয়েছে, “রামধনু জোটকেই রবিবার ক্যামেরায় সামনে প্রমাণ করল সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস। রবিবার দুপুরে যখন বোঝাই যাচ্ছিল বিরোধীরা ১০-০ গোল খেয়ে গিয়েছে, তখন ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম-বিজেপি ও কংগ্রেস কর্মীরা ভোটের ময়দান ছেড়ে চলে আসেন বড়তলা থানা ঘেরাও করতে… অভূতপূর্ব দৃশ্য।”
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, নির্বাচনের ঠিক সপ্তাহ দুয়েক আগেই কনফিডেন্ট তৃণমূল দাবি করেছিল, কংগ্রেস ‘ডিপফ্রিজে’ চলে গিয়েছে। সিপিএমকে নিশানা করে ঘাসশিবির লিখেছিল, ‘জাদুঘরে CPM’। পুরভোটের বিরোধীদের এক হাট্টা হয়ে প্রতিবাদের পর কটাক্ষের সুরে শাসকদল বিঁধল নতুন তত্ত্বে!
রবিবার ৯৬, ১০১, ১০২, ১১০ নং ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে। বাঘাযতীন মোড়ে অবরোধ করে বামেরা। বেঁধে যায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ খানের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। খিদিরপুরে রাস্তায় বসে পড়েন কর্মীরা। ভোটে অনিয়মের অভিযোগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিসে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেসের কর্মীরা। তাঁদের আটক করে পুলিশ। শহরে প্রায় সর্বত্র গাজোয়ারি, এজেন্ট বসতে না দেওয়া, মারধর, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে সরব হন বিরোধীরা। বিজেপির ক্ষেত্রেও একাধিক প্রতিবাদে ছবি ধরা থাকে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। মানছে না শাসকশিবির।
গোটা পরিস্থিতি ‘দক্ষ’ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছে শাসকদল। ‘কলকাতা পুলিশ ইজ় দ্য বেস্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত হল আরও একটি কলম। বিরোধীরা বারবার ভোট লুঠের অভিযোগ তুলেছে। আর সেটাকেই চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “ভোট দিতে বাধা কিংবা অশান্তির অভিযোগ থারলে প্রমাণ দিন, ফুটেজ থাকলে দিন। যদি দেখা যায় দলের কেউ জড়িত, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”
বিরোধীরা গলা ফাটাচ্ছেন, কিন্তু বুক চিতিয়ে শাসকদলের দাবি, কলকাতা পুরভোট হয়েছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণই!
আরও পড়ুন: Kolkata municipal corporation election 2021: শুভেন্দুর ‘গায়ে হাত’ পুলিশের! কড়া নিন্দা জেপি নাড্ডার