কলকাতা: রাতের শহরে ফের দুর্ঘটনা। বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হল একজনের। আহত হয়েছেন আরও একজন। শুক্রবার রাতে নেতাজিনগর (Netaji Nagar) থানা এলাকার রথতলায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। শ্যামল দাস নামে বছর তেইশের এক যুবকের মৃত্যু হয় এই দুর্ঘটনায়।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শ্যামল দাস ও কার্তিক নস্কর নামে দু’জন বাইক নিয়ে গড়িয়া থেকে টালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন। নেতাজিনগর থানা এলাকার রথতলায় বাইকটি একটি বাতিস্তম্ভে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত হন দু’জনই। উদ্ধার করে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলে বাইকচালক শ্যামল দাসকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, শ্যামল, কার্তিক কারও মাথাতেই ঘটনার সময় হেলমেট ছিল না। তাই আঘাতও বিপদজনক হয়ে ওঠে।
ক্রমেই বিপদজনক হয়ে উঠছে রাতের কলকাতা। একাধিক প্রাণ পথের বলি হয়েছে গত কয়েক মাসে। আহতের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। কিছুদিন আগেই মা ফ্লাইওভারে চিংড়িঘাটা র্যাম্পে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার শিকার হন এক সেনা কর্মী। রাত ১টা নাগাদ তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এসএসকেএমের দিক থেকে চিংড়িঘাটার দিকে যাচ্ছিল বাইকটি। সেই সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। রাত ১০টার পর মা ফ্লাইওভারে বাইক ওঠা নিষেধ। দু’দিকেই থাকে পুলিশি নিরাপত্তা। তা সত্ত্বেও পুলিশের চোখ এড়িয়ে কী ভাবে ফ্লাইওভারে বাইক উঠেছিল তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
নবমীর রাতেও ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনা ঘটে মা উড়ালপুলে। বাইক নিয়ে ঠাকুর দেখতে যাচ্ছিলেন একদল যুবক। অভিযোগ, বাইকের বেপরোয়া গতির কারণে আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটে বিপত্তি। দুর্ঘটনায় আহত হন চারজন বাইক আরোহী। মা উড়ালপুল ধরে হু হু করে ছুটছিল একের পর এক বাইক। স্পিডমিটারে নজর দেওয়ার সময় ছিল না কারও। এমনকী খেয়াল নেই, মাথায় হেলমেটটাও যে পরা হয়নি।
এর আগে চতুর্থীর দিনও সায়েন্স সিটির দিক থেকে আসা একটি বাইক মেট্রোপলিটন লেনের কাছে রাস্তার ডিভাইডারে সজোরে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে লোহার গার্ডরেলে আঘাত পান বাইকের সওয়ারি। দুর্ঘটনায় শরীর থেকে মাথা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উল্টোদিকের লেনে গিয়ে পড়েন বাইক চালক। বাইকের পেছনে বসে ছিলেন এক তরুণী। তিনিও গুরুতর জখম হন। তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে আমরি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
মাস চারেক আগে এজেসি বোস রোড হয়ে পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্টে মা উড়ালপুলের ওঠার মুখে একটি মোটর বাইক আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। সেখান থেকে ছিটকে পড়েন বাইক চালক। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করেন ট্রাফিক পুলিশরা। নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
একদিকে নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে থাকা বাইকের গতি, অন্যদিকে হেলমেট না পরে বাইক চালানো বা তাতে সওয়ার হওয়া। অধিকাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই এই দুই ‘কমন সিনড্রম’ পাওয়া যায়। এখন আবার শীতের মরসুম আসছে। রাতে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতাও কমতে শুরু করবে। ফলে সতর্ক হয়ে এবং সবরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়ে বাইক চালালে যে কোনও রকম দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
আরও পড়ুন: মানুষের জীবন বিপন্ন করে অচলাবস্থা আরজি করে, এবার হাইকোর্টে মামলা দায়ের