কলকাতা: বীরভূমের ‘বাঘ’ দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির কথা মনে আছে? গরু পাচার মামলায় ইডি যখন ‘রণসজ্জা’ নিয়ে পুরো তৈরি! ঠিক তার আগের রাতেই বীরভূমের দুবরাজপুরের এক তৃণমূল নেতা শিব ঠাকুরের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘শোন অ্যারেস্ট’ করে রাজ্য পুলিশ। যার জেরে দোলাচলে পড়েছিল কেষ্টর দিল্লির যাত্রা। সেই সময়, বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছিল, একেবারে দূতের মতো এসে কেষ্টর দিল্লি যাত্রা আটকে দেন শিব ঠাকুর। যদিও, এতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। তিহাড়ে যেতেই হয়েছে তাঁকে। এবার আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের র্যাডারে সন্দীপ ঘোষ। চলছে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। তাঁরই মাঝে সন্দীপকে তলব লালবাজারের। এখানেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, কেষ্টর মতোই কি ভবিতব্য হবে সন্দীপের ?
আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে বুধবার পর্যন্ত টানা ছ’দিন সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনওবারই তাঁর বয়ানে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সন্তুষ্ট হয়নি বলে খবর সূত্রের। এরই মধ্যে আচমকা সিট (SIT) গঠন কলকাতা পুলিশের। গত ১২ অগস্ট ইস্তফা দেওয়ার সময় প্রায় ছ’বার নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই অভিযোগে এখন তলব করা হচ্ছে লালবাজারে।
আর্থিক তছরুপ, ওষুধ, মেডিক্যাল সরঞ্জামের কালোবাজারির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সন্দীপের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালে ডেপুটি সুপার নন মেডিক্যাল আখতার আলি ভিজিল্যান্সে চিঠি করেন। স্বাস্থ্য দফতরের ভিজিল্যান্স বিভাগেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এরপর আরজি কর-আন্দোলনে দেখা গেল সন্দীপবাবু অধ্যক্ষ পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইস্তফা দিয়েছেন। তবে রাজ্য সরকার সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেনি। পরে হাইকোর্টে গুঁতো খেয়ে তাঁকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত এত অভিযোগ থাকার পর যেই সিবিআই তদন্ত শুরু করল তখনই তাঁর বিরুদ্ধে সিট গঠন? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
ওয়াকিবহাল মহলের অনেকে মত, সন্দীপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে নেমে সিবিআই যদি সেই অভিযোগের শিঁকড়ে পৌঁছতে চায় তাতে সন্দীপের চাপ হতে পারে। তাই হয়ত সিবিআইয়ের কোনও কড়া পদক্ষেপের আগেই সন্দীপকে বাঁচাতে চাইছে কলকাতা পুলিশ? প্রশ্ন থাকছেই।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সন্দীপের বিরুদ্ধে অ্যান্টি কোরাপসান ভিজিল্যান্স কমিশন থেকে তলব করা হয়েছে। যদি এই কেসে পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নিয়েও নেয়, তবুও তিলোত্তমা -কাণ্ডে যদি তাঁর নাম জড়ায় তাহলে কিন্তু তিনি ছাড়া পাবেন না। শিব ঠাকুরের গলা টেপার কেসে অনুব্রত মণ্ডল সাতদিন জেল খাটলেন। মাফ হল না। সিবিআই গ্রেফতারি পিঠিয়ে গিয়েছিল কয়েকটাদিন। আর আরজি কাণ্ড বড় মামলা। কলকাতায় এরকম মামলা কমই হয়েছে। তিলোত্তমার ঘটনায় যদি নাম জড়ায়, তাহলে দুর্নীতি কেসে গ্রেফতার হলেও তিনি ছাড়া পাবেন না। তাঁকে জেরা করাও হবে।” বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “শুধু সিট বলে নয়। এর আগে যতগুলো কমিশন তৈরি হয়েছে তার একটাও রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি। সিট হল অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা। অন্তত এ ক্ষেত্রে তাঁরা করবে।” তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।