কলকাতা: মধ্যপ্রদেশ , রাজস্থান , ছত্তীসগঢ়ে জয়ের পথে বিজেপি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই মুখের হাঁসি চওড়া হচ্ছে মোদী-ব্রিগেডের। চতুর্দিকে গেরুয়া-জয়জয়কার। কিন্তু কোনওভাবে কি এর আঁচ পড়তে চলেছে বাংলায়? তিন মাস পর ২৪-এর মহারণে কি আদৌ ফ্যাক্টর হতে চলেছে এই ফলাফল? বিজেপি-র এই জয়ের নেপথ্যের কারণ অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “এই জয় আসলে বিজেপির নয়, এটা কংগ্রেসের ব্যর্থতা।” এই ফলাফলে পদ্ম শিবিরকে কোনও নম্বর দিতেই নারাজ জোড়া ফুল শিবির। সাংবাদিক বৈঠক করে কুণাল ঘোষ এদিন বললেন, “অন্য রাজ্যে কে কী কোন দল ভাল করেছে, তাতে এ রাজ্যে দু’একজন চিল চিৎকার করতে পারেন, কিন্তু বেল পাকলে কাকের কী? বেল ওপাড়ার গাছের পাকছে, তাতে এ পাড়ার কাকের কোনও সম্পর্ক নেই। ওখানে কংগ্রেসের ব্যর্থতায় ওপাড়ায় দু-তিনটি গাছে কিছু বেল পেকেছে। তাতে বাংলার মাটিতে কাকের কোনও সম্পর্ক নেই।”
কুণালের বক্তব্য, বিজেপি তো আসলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামাজিক স্কিম নকল করেই জিতেছে। তাঁর কথায়, “ওই রাজ্যগুলির সবাই বুঝতে পারছে ওই সামাজিক স্কিম মমতার।” বাকি রাজ্য়ের নির্বাচনের ফল তাই বাংলায় কোনওভাবেই ফেলবে না ফলে স্পষ্ট করলেন কুণাল ঘোষ।
কিন্তু রাজ্যের বিরোধীরা যে কটাক্ষ করছেন, ইন্ডিয়া জোট ‘ফ্লপ’! সে ব্যাপারে? কুণাল বললেন, “এই ব্যর্থতা থেকে কংগ্রেসের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। কারণ, কংগ্রেস দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে উঠে দেখছে তারা হেরে গিয়েছে। আমরা ইন্ডিয়া জোট গড়েছি । তৃণমূল বাংলায় বিজেপি- কে হারিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস তাদের গড় ধরে রাখতে পারছে না। এটা মানতে হবে।” এর নেপথ্যে কংগ্রেসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন কুণাল। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তৃণমূল নেত্রীর বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে অ-বিজেপি ইন্ডিয়া জোটে। তৃণমূল নেতৃত্বের চোখে এই জোটের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জোট নেত্রীকে ‘কালো কাপড় পরুন’ কটাক্ষ ছুড়েছেন। তারও জবাব দিয়েছেন কুণাল। তিনি বলেছেন, এর প্রভাব চব্বিশের নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটে পড়বে না। কুণালের কথায়, “কংগ্রেসকে শিক্ষা নিতে হবে।” যারা গ্রহণযোগ্য মুখ, তাঁদের এগিয়ে দিতে হবে। মমতার মতো মুখ রয়েছে। শীত ঘুম, জমিদারি মেজাজ ছাড়তে হবে। আমাদের ইন্ডিয়া জোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।” এরপর ফের কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে কুণাল বললেন, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বিজেপিকে রুখছে। আর কংগ্রেস বিজেপির দালালি করছে । তৃণমূলের ক্ষতি করছে, এটা হয় না। নিজের গড়ে হারবো আর অন্যের গড়ে কাঠি করবো । এটা হয় না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কুণাল ঘোষের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ২৩ নভেম্বর নিজের দলকে উজ্জীবিত করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিপিএমকে দুষতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে কংগ্রেসের ব্যাপারে একটাও কথা বলেননি। এবার এই ফলাফল বেরোতেই কংগ্রেসকে দূষতে শুরু করল ত়ৃণমূল। মুখ খুললেন মুখপাত্র। এবার হয়তো নেত্রীও নিজের অবস্থান ব্যক্ত করবেন।