কলকাতা: বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা বুঝিয়ে দিচ্ছে এ রাজ্যের শিল্পের হাল হকিকত। শনিবার এ রকমই দাবি শোনা গেল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের গলায়। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যার সঙ্গে এ রাজ্যে পুজোর সংখ্যার তুলনা করে তিনি এ রাজ্যের শিল্পের অবস্থা বিজেপি শাসিত রাজ্যের থেকে ভাল বলে দাবি করেছেন কুণাল। এই বক্তব্য সামনে আসার পরই বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিরোধীরা। বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যার সঙ্গে শিল্প পরিস্থিতির অবস্থার সরাসরি সম্পর্ক টেনে সরলীকরণে আপত্তি রয়েছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও।
শনিবার তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি কি এবং সেই শিল্পকে কেন্দ্র কতগুলি বিশ্বকর্মা পূজা হচ্ছে তা জানাতে তৃণমূলের তরফে প্রতিটি ব্লক স্তরে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ব্লক ধরে ধরে জানাতে বলা হয়েছিল। ব্লকের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যে মোট ছোট বড় মিলিয়ে ৩ লক্ষ ২৩ হাজার বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। যার মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৩ লক্ষ ১৮ হাজার ২৬০টি। তাহলে শিল্পের অবস্থা খারাপ কিভাবে হল? যেখানে গুজরাটে তিন হাজারের কিছু বেশি এবং ত্রিপুরায় ৬০০-র কিছু বেশি বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি এবং বিক্রি হয়েছে।” বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলি তুলনায় এ রাজ্যের শিল্পের অবস্থা অনেক ভাল বলেই দাবি করেন কুণাল।
কিন্তু কুণালের এই দাবির সঙ্গে সহমত নন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ অনির্বান দত্ত। তিনি বলেছেন, “শুধুমাত্র বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা দিয়ে শিল্পের অগ্রগতি বা নিম্নগতি সেটাকে কখনই এত সরলীকরণ করা যায় না। সারা ভারত জুড়েই বেকারত্ব এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সারা ভারতে ভারী শিল্পের অগ্রগতি তেমন হয়নি। তার আঁচ পশ্চিমবঙ্গেই পড়েছে। কর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা চালাতে হয়, সেখানে চাকরিপ্রার্থীদের যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, তেমন চাকরি তৈরি করবে যাঁরা তাঁদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে শিল্পবান্ধব পরিবেশ বেড়েছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে শিল্প বাড়ালে রাজ্যের অগ্রগতি হবে।”
কুণালের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য এ নিয়ে বলেছেন, “বিভিন্ন মণ্ডপে এখনও পর্যন্ত যে সব বিশ্বকর্মার প্রতিমা রয়েছে, সেখানে গিয়ে যদি আপনি কুণাল ঘোষের বক্তব্য শোনান তাহলে দেখবেন প্রতিমায় প্রাণ সঞ্চার হয়ে যাবে। মাটির মূর্তি হেসে উঠবে।” এর পর রাজ্যের শাসকদলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, “মানুষ তৃণমূলকে দেখে নিয়েছে। বান্ধবীর ফ্ল্য়াটে ৫০ কোটি। খাটের নীচে ১৭ কোটি। উন্নয়ন ডেঙ্গির মশার কামড় খেয়ে মশারির ভিতরে। রোজই কোনও না কোনও শিল্পপতি এ রাজ্য থেকে পুঁজি সরিয়ে চলে যাচ্ছেন।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার একটি বাংলার কর্মসংস্থানের জন্য ঠাকুরের কাছে ঠাকুরের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে একটি ফেসুবুক পোস্টও করেছেন।
সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সভাপতি অনাদি সাহু এ নিয়ে বলেছেন, “রাজ্যের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের যে চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে রাজ্যে কিছুই হয়নি। কুণাল ঘোষ কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে সারা দেশের অন্য রাজ্যের থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।” তৃণমূলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, “কর্মসংস্থান, অর্থনীতি এ সবের ব্যাপারে ওরা কম বোঝেন। ওরা খেলাধুলো, মেলা- এ গুলো রাজ্য সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কুণালবাবু ও তাঁর দল খেলা, মেলা নিয়েই থাকতে চান। বাংলার যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য অন্য রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”