কলকাতা : বনগাঁ আদালতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছিল। আর সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন লস্কর-ই-তইবা সদস্য শেখ আব্দুল নইম। বর্তমানে তিনি তিহার জেলের বন্দি হলেও মামলায় সওয়াল করতে কলকাতায় আসতে চেয়েছেন তিনি। সেই মতো নিয়েও আসা হয়েছে নইমকে। আর মঙ্গলবার নিজেই আদালতে সওয়াল করলেন মৃত্যুদণ্ডের সাজা-প্রাপ্ত সেই আসামী। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসার সময় বনগাঁয় গ্রেফতার হন নইম ও তাঁর বেশ কয়েকজন সঙ্গী। পরে ২০১৮ সালে বনগাঁ আদালতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন নইম।
ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার ছুটি কলকাতা হাইকোর্ট। অন্য কোনও মামলার শুনানি নেই এ দিন। শুধুমাত্র এই বিশেষ মামলার জন্য এ দিন আদালত খোলা হয়েছে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চে ছিল শুনানি। স্পর্শকাতর মামলার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ দিন এই শুনানি রাখা হয়েছিল।
সেই মতো শুনানির ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে এ দিন আদালতে নিয়ে আসা হয় নইমকে। শুনানি শুরুর আগে সাংবাদিক-সহ উপস্থিত প্রত্যেকের মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী মুড়ে ফেলে আদালত চত্বর।
কোনও আইনজীবী ছাড়া নিজেই মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নইম। তাঁকে বলা হয়েছিল তিহার জেলে থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্য়মে মামলায় অংশ নিতে পারবেন তিনি। কিন্তু তাতে নইম রাজি হননি। এ দিন আদালতে নিজেই সওয়াল করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে সারা দেশের কোনও বিস্ফোরণের সম্পর্ক নেই। মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশ তিনি জানিয়েছেন নিম্ন আদালতের অনেক নথি তিনি পাননি।
এ দিন আদালত তাঁর পক্ষে সওয়াল করার জন্য একজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত-বান্ধব আইনজীবী)-কে অনুরোধ করেছে। সাধারণত এই ধরনের স্পর্শকাতর মামলায় যদি আইনজীবী না পাওয়া যায় বা আইনজীবীকে দেওয়ার মতো টাকা মামলাকারীর না থাকে, তাহলে এই ভাবে আইনজীবী ঠিক করে দেওয়া হয়। কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত আইনজীবী শেখর বসুর কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে তিনি এই মামলা লড়বেন কি না, তা এখনও বিবেচনাধীন।
২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে শেখ আব্দুল নইম ও তার সঙ্গীরা প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলেন। বাকি তিনজনের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মহম্মদ ইউনুস, আবদুল্লা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা মুজাফফর আহমেদ। তাঁদের কাছে থেকে ভুয়ো পরিচয়পত্র, লাইসেন্স পাওয়া যায়। সঠিক নথি দেখাতে পারেননি তাঁরা। পরে নইমদের কাছ থেকে বিস্ফোরকও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিআইডি এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছিল। বনগাঁ আদালতে সেই মামলা হয়। তাঁদের লস্কর যোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। মুম্বইয়ের ট্রেন বিস্ফোরণের সঙ্গে নইমের যোগ থাকার প্রমাণ পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা।
পরে বিচারাধীন অবস্থাতেই পালিয়ে যান নইম। তাঁকে তদন্তের স্বার্থে ভিনরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রেন থেকেই পালিয়ে যান তিনি। সেই সময়ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ নইমের বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে তাঁকে দিল্লিতে এনআইএ আদালতে পেশ করা হয়। এরপর থেকেই তিহার জেলে বন্দি তিনি। আর ২০১৮-তে বনগাঁ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ও মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
শুনানি চলাকালীন আপাতত কলকাতাতেই রাখা হবে নইমকে। তিনি কোন জেলে থাকবেন, তা ঠিক করবেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি।