কলকাতা: তদন্তের ১৮ মাস পার হয়ে গিয়েছে। তারপরও তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে কার্যত ক্ষুব্ধ বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আজ, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ইডি-র দেওয়া রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। কেন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না? কেনই বা সম্পত্তি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই? এই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। ইডি আধিকারিক তদন্তের চাপে আছেন কি না, সেই প্রশ্নও করেছেন তিনি। আদালতের নির্দেশ মেনে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর সম্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়লেও তাতে অনেক ফাঁক আছে বলে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। আদালত যে চাইছে দ্রুত তদন্ত শেষ হোক, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
এদিন বিচারপতি সিনহা সরাসরি ইডি অফিসার মিথিলেশ মিশ্রকে বলেন, “আপনি কি কাজের চাপে আছেন? আপনি কি চান এখান থেকে রিলিফ পেতে?” উত্তরে ইডি আধিকারিক বলেন, “হ্যাঁ। ইডি ওভার বার্ডেন। এই তদন্ত ছাড়াও সেকেন্ডারির তদন্ত করতে হচ্ছে।” রিপোর্ট নিয়ে অসন্তুষ্ট বিচারপতি আদালতে উপস্থিত অফিসারকে বলেন, “আপনি কি পোস্ট অফিস? যা আসবে গ্রহণ করে পাস দেওয়াই আপনার কাজ?”
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নামে এই কোম্পানির কাজ কী সেটা রিপোর্টে স্পষ্ট নয় বলে পর্যবেক্ষণ বিচারপতি সিনহার। এই প্রসঙ্গে ইডি জানিয়েছে, বোতল তৈরি করত এই সংস্থা, পানীয় জলও তৈরি করত। লিপস এন্ড বাউন্ডস-এর থেকে অনেক টাকা উদ্ধার হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইডি। কিন্তু এইটুকু তথ্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে আদালত। সংস্থাটির উদ্দেশ্য কী ছিল?
সিবিআই এদিন জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছে তারা। আর আর্থিক বিষয়টা দেখছে ইডি। এ কথা শুনে বিচারপতি বলেন, “ইডি দেখছে আমরা মানছি। কিন্তু কিছু সামনে এলে আপনি চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না। আপনাদের যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন আইন আছে।” চলচ্চিত্র জগতের একাধিক নাম জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও রিপোর্টে কেন মাত্র একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি সিনহা।
এদিন ইডি-কে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বিচারপতি বলেছেন, “আদালত কোনও তদন্তকারী সংস্থা নয়। আদালতের কাজ নয় দৌড়ে বেড়ানো। আদালত আপনাদের বিশ্বাস করে। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনারা কিছু করছেন না।” সংশ্লিষ্ট সংস্থার লেনদেন, গ্রাহক, কারা যুক্ত ছিলেন, তাদের ঠিকানা ও নাম সব জানতে চেয়েছেন বিচারপতি সিনহা। তিনি উল্লেখ করেছেন, যে সব শিক্ষকের নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছে, তাদের পড়ানোর অধিকার নেই, তাই তিনি চান দ্রুত এই তদন্ত শেষ হোক। আগামী বুধবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।