বামেরা কি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেওয়া যাবে না। তবে গতকাল ধর্মতলায় যা জমায়েত হল, তাতে এই প্রশ্নটা মনে হচ্ছে তুলে দিতে পেরেছেন সৃজন-মীনাক্ষীরা। সবচেয়ে বড় কথা, গত বিধানসভা ভোটের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল বাংলার রাজনীতিতে দলটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে কিনা।সেখানে নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর আলোচনায় নিয়ে আসার মত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারাটাই তো তাদের কাছে বিরাট ব্যাপার। খেলা ঘুরছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে খেলা যে হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল চৌরঙ্গিতে। ভিড়ের বহর দেখে চওড়া হাসি বামেদের মুখে।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বামফ্রন্ট সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতেন। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে এক্সপ্রেসওয়ে আটকে অবস্থান বা ধর্মতলায় অনশন মঞ্চ বাঁধার কাজটা পুলিশকে তোয়াক্কা না করেই করেছিল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্রেডমার্ক আন্দোলনের ফলাফল কী হতে পারে, সেটা বামফ্রন্টের অজানা নয়। তাই কি মমতা ব্যানার্জির দেখানো পথেই হাঁটলেন মীনাক্ষী মুখার্জিরা? বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুসরণ করেই কি পুলিশকে ঘোল খাওয়ালো SFI-DYFI? গতকাল ছাত্র-যুবরা যেভাবে জমায়েত করেছে, মিটিং করেছে, তা দেখে বামেদের আহ্লাদে গলে পড়ার কারণও আছে যথেষ্ট। পুলিশের অনুমতির তোয়াক্কা না করে, ধর্মতলা আটকে যেভাবে কর্মসূচি সফল করেছে SFI-DYFI, তাতে বামেদের জন্য বেশকিছু পজিটিভ সাইন আছে।
সব থেকে বড় কথা, বামেরাই নির্ণায়ক হয়ে উঠছে কি না, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এই ভিড় যেভাবে সফলভাবে ব্যস্ত সময়ে ধর্মতলা দখল করেছে, তা দেখে বিজেপি একটা প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপির দাবি মূলত দুটো, এক বামেদের কর্মসূচিতে লোকের জোগান দিয়েছে তৃণমূল। আর দুই, বিজেপির নবান্ন অভিযান ব্যর্থ করতে পুলিশ যতটা তত্পর ছিল, SFI-DYFI-কে আটকাতে তার বিন্দুমাত্র শক্তিও ব্যয় করেননি কলকাতা পুলিশের কর্তারা? কারণটা কী? বঙ্গ বিজেপি বলছে, সেটিং। বিজেমূলের পালটা বামমূল তত্ত্বও বাজারে এনে ফেলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তৃণমূল পাল্টা বলছে, বিজেপির মতো অসভ্যতা করেনি CPIM-এর ছাত্র-যুব সংগঠন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পরামর্শ দিয়েছেন, কীভাবে সুস্থ স্বাভাবিক আন্দোলন করতে হয় সেটা, SFI-DYFI-কে দেখে শিখুক বিজেপি। অর্থাত্ কেউ-ই বামেদের সমাবেশের সাফল্যকে স্বীকৃতি না দিয়ে থাকতে পারছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বিজেপি বা তৃণমূল বামেদের এতো পাত্তা দিচ্ছে? ভিড় হয়েছিল বলে? ভিড় আর ভোট যে এক জিনিস নয়, সে তো SFI-DYFI-এর বাচ্চা বাচ্চা কর্মীরাও বোঝে। তাহলে, তৃণমূল-বিজেপির ধুরন্ধর নেতারা টেনশন করছেন কেন?
২০১৩ সালে মে মাসে, সুপ্রিম কোর্ট CBI-কে খাঁচা বন্দি তোতা বলেছিল। এজেন্সিকে নিয়ে এতো কথা খরচ করার কারণ CBI এবং ED-র সাম্প্রতিক ব্যস্ততা। হাওয়ালার মতো আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে বিশেষজ্ঞ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। অভিযোগ, NDA সরকারের আমলে CBI-এর মতোই বিরোধীদের বিরুদ্ধে ED-র ব্যবহার বেড়েছে। কোনও সন্দেহ নেই, দলমত নির্বিশেষে, নেতাদের একটা বড় অংশের সম্পত্তি, গত কয়েক বছরে বহুগুণ বেড়েছে। তাই ED-র ব্যস্ততাও বেড়েছে। নেতারা কীভাবে টাকা কামাচ্ছেন? সেটা তো পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। গরু, কয়লা বা নিয়োগ কেলেঙ্কারির টাকা, ওই হাওয়ালার মাধ্যমেই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে মনে করে ED। সেই তদন্ত চলছে। এবং তদন্ত যতটা এগোচ্ছে ততই তৃণমূলকে বিব্রত হতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোট এবং লোকসভা ভোটের আগে, রাজ্যের শাসক দলকে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, তৃণমূল কতটা মুশকিল আসান করতে পারবে সেটা আইডিয়া করার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু, একটা আভাস কি দিতে শুরু করেছে বামেরা? অনেকেই বলছেন, যতদিন দিন যাবে, ততই ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন বামেরা। সত্যিই কি তাই?
ও হ্যাঁ, এবছরের পুজোটা জেলেই কাটাতে হবে পার্থ চ্যাটার্জি এবং অনুব্রত মণ্ডলকে। কাজেই তাঁদের নিয়েও কিছু কথা আজ বলতে হবে। যে কথাগুলো, না বললেই নয়। টিভি নাইন বাংলা দেখবেন, রাত ৮.৫৭