TV9 Explained: শুধু ‘ভানুরাই’ পাচ্ছে লটারি? কীভাবে? কোথায় দুর্নীতি? কীভাবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে?

TV9 Explained: দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সিকিমেও। এই রাজ্যে ৪ হাজার ৫০০ কোটির জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্ত করছে সিবিআই।

TV9 Explained: শুধু ‘ভানুরাই’ পাচ্ছে লটারি? কীভাবে? কোথায় দুর্নীতি? কীভাবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 06, 2022 | 3:47 PM

সুজয় পাল 

কলকাতা: গরু পাচার মামলায় জেলে বন্দি দশা কাটলেও বর্তমানে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অস্বস্তি বাড়িয়েছে লটারির এক কোটি টাকার পুরস্কার। কথা হচ্ছে বীরভূমের ‘বেতাজ বাদশা’ তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে। এদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্পষ্টতই অভিযোগ করেছেন লটারিকে হাতিয়ার করেই কালো টাকা সাদা হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি। দুর্নীতিতে যুক্ত রয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের উপরের স্তরের নেতারা। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে এ শুধু বাংলা নয়। এমন চিত্র দেখা গিয়েছে একাধিক রাজ্যেও। 

দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সিকিমেও। এই রাজ্যে ৪ হাজার ৫০০ কোটির জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্ত করছে সিবিআই। অভিযোগ, সিকিম সরকারের অর্থ দফতরের অফিসারদের যোগসাজশেই সরকারের এই বিশাল ক্ষতি হয়েছে। দুর্নীতির অঙ্ক আরও বেশি বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থার একাংশের। 

কোন কোন রাজ্যে চলছে লটারি জালিয়াতির তদন্ত? 

সিকিমের পাশাপাশি কোচিতে লটারি জালিয়াতির তদন্ত করছে ইডি। এক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের লটারির ফার্স্ট প্রাইজ জেতার অভিযোগ রয়েছে। কলকাতাতেও লটারি জালিয়াতির ৪০৯.০২  কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। প্রথম দফায় এই টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। পুরোনো ও নতুন সব পন্থা অবলম্বন করে এই জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের একটি মামলার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছিল ইডি। মামলাটি এখন আদালতের বিচারাধীন। বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের এক কোটি টাকা লটারি মেলার পর তদন্তে নেমেছে সিবিআইও।

কী বলছে আইন? 

দ্য লটারিজ (রেগুলেশন) আইন ১৯৯৮ অনুযায়ী লটারি ব্যবসার পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণ হয় ভারতে। এই আইনে লটারি ব্যবসায় রাজ্যগুলিকেও প্রায় সমান ক্ষমতা দেওয়া আছে। সারা দেশে এখন একটি সংস্থাই লটারির ডিস্ট্রিবিউটর। যদিও আইন অনুযায়ী একাধিক ডিস্ট্রিবিউটর থাকার কথা। সহজ কথায় সারা দেশে একটি ব্র্যান্ড নেমেই বিভিন্ন রাজ্যের লটারি বিক্রি হয়। বাংলায় সবথেকে বেশি বিক্রি নাগাল্যান্ড রাজ্য লটারির। বাকি পঞ্জাব ও সিকিম রাজ্য লটারিও বিক্রি হয় প্রচলিত ব্র্যান্ড নেমে। ভারতে প্রায় ১০টি রাজ্যে সব থেকে বেশি লটারি বিক্রি হয়। তার মধ্যে বাংলা অন্যতম বড় বাজার। 

তবে ২০২০ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজস্ব লটারি খেলা বন্ধ করে দেয়। আইন অনুযায়ী ‘বাম্পার লটারি’ বিশেষ উৎসব ছাড়া খেলা হবে না। তাও বছরে ৬ বারের বেশি ‘বাম্পার লটারি’ খেলা হবে না। নিয়ম বলছে, যে পরিমাণ লটারি বিক্রি হবে তার টাকা রাজ্যের (যে কোনও রাজ্যের) কোষাগারে জমা থাকবে। একইসঙ্গে যে অবিক্রিত লটারির টিকিটে পুরস্কার থাকবে তা সরকারের কোষাগেরই থাকে। একইসঙ্গে লটারি আইন ভঙ্গ করলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হতে পারে। লটারির ট্যাক্সের টাকা সরকার রাজ্যের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করবে। এটাই আইনে বলা আছে।  আইনে এও বলা আছে, কত লটারি কোথায় ছাপা হচ্ছে সেসব তথ্য সরকারকে জানাতে হবে। কিন্তু সেখানেও হয় কারচুপি। 

কোন পথে হচ্ছে দুর্নীতি? হাতিয়ার জিএসটি ফাঁকি ? 

বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি হত অবিক্রিত টিকিটেই। ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে ফিরে আসা অবিক্রিত টিকিটের সর্বোচ্চ পুরস্কার থাকত। সেখানেই দুর্নীতি। তদন্তে দেখা গিয়েছে, সারা দেশে একই মালিকানাধীন ডিস্ট্রিবিউটরই সেই পুরস্কার পেত। এদিকে কিছু নতুন নিয়ম তৈরি হয় ২০১৭ সালের পর থেকে।  লটারি বিক্রির উপর জিএসটি কার্যকর হয়। রাজ্য লটারি ব্যবসা নিজে করলে ১২ শতাংশ এবং সরকার কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে ২৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হয়। এখানেই এখন বড় অঙ্কের জালিয়াতি হয় বলে অভিযোগ তদন্তকারীদের। জিএসটি ফাঁকি দিতে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে বিক্রি হওয়া লটারির পরিমাণ কম দেখানো হয়। বাকি ঘুরপথে লটারি ছেপে বাজারে এজেন্ট দিয়ে বিক্রি করা হয়। এভাবে মোটা টাকা ক্ষতি হয় রাজ্যগুলির। 

কীভাবে হচ্ছে কালো টাকা সাদা? 

২০১৭ সালের আগে ২০১৬ সালে CAG সিকিম লটারির কয়েকশো কোটির জালিয়াতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে স্পষ্ট যে সরকারের পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকার জন্যই এই জালিয়াতি চলছে। ডিস্ট্রিবিউটরকে বলা হয় ‘মার্কেটিং এজেন্ট’। এই এজেন্টের হাত ধরেই চলছে সবথেকে বেশি দুর্নীতি। মাঠে আনা হয়েছে দুর্নীতির নতুন পন্থা। ডিস্ট্রিবিউটররা সর্বত্র নিজেদের এজেন্ট ছড়িয়ে রাখে। কেউ কোটির পুরস্কার পেলেই তাকে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে এজেন্ট। তারপর সেই টিকিট প্রভাবশালীদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাদের থেকে আসল পুরস্কারমূল্য (ধরা যাক ১ কোটি) নিয়ে কালো টাকা সাদা করা হয়। এতে বাড়তি টাকা পকেটে ঢোকায় ডিস্ট্রিবিউটররা। এর আগে দক্ষিণ ভারতে লটারি দুর্নীতির চার্জশিটে সিবিআই এরকম এজেন্টের উল্লেখ করেছিল।