কলকাতা: টিকিট না পেয়ে আগেই অভিমানী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন। তাঁর অভিযোগ ছিল, বারবার আশ্বাস দিলেও দল তাঁকে গুরুত্ব দেয়নি। বাবুন বলেছেন, “দিদির যাঁরা বেশি কান ভাঙায় তাঁদের মধ্যে অনেকেই টিকিট পেয়েছেন।” এই সব বিতর্কের মধ্যেই ফের বিস্ফোরক স্বপন। জানালেন, হাওড়া থেকে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়তে চাইছেন। একই সঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিলেন তৃণমূল প্রার্থী প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও।
বুধবার টিভি ৯ বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি হাওড়া থেকে নির্দল হয়ে দাঁড়াতে চাইছি। তাও আমি দিদির সঙ্গে আলোচনা করব। দিদি যা বলবেন আমি অক্ষরে-অক্ষরে পালন করব।” এরপর প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। অভিযোগ, প্রসূণবাবুর সঙ্গে হাওড়ার সাধারণ মানুষের সংযোগ নেই। এই নিয়ে প্রায়শই নাকি তাঁকে অভিযোগ শুনতে হয়। সাধারণ মানুষ থেকে মন্ত্রী–সকলেই ফোন করে প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। স্বপন বলেন, “২০১৯ সাল থেকে চেয়েছিলাম উনি যেন হাওড়ায় প্রার্থী না হয়। অন্য যে কেউ হতে পারেন। ওইখানে তো অনেক ভাল ভাল মানুষ রয়েছেন। জনসংযোগ বিহীন সাংসদ না হওয়াই পার্টির পক্ষে ভাল। আমরা তৃণমূল কংগ্রেস দলটা করি তো তাই বুঝি।” এখানেই শেষ নয়। তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, “জনসংযোগ বিহীন মানুষের ভোট পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়। হাওড়ার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। ওইখানের সকলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। অরূপ রায়, প্রিয়া পাল, কৈলাস মিশ্র অনেকেই আমায় অভিযোগ করেছেন।”
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে কালীঘাটের ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট ছেড়ে হাওড়ার শিবপুরের ভোটার তালিকায় নাম তোলেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ই কার্যত তিনি জানিয়েছিলেন, হাওড়াবাসীর পাশে তিনি থাকতে চান। দল প্রার্থী করলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মসূচিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু এবারও তা না হওয়ায় অভিমানী মমতার ছোট ভাই। বস্তুত, প্রসূণ ও স্বপনের এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়। পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক চার-পাঁচ বছর আগে। সেই সময় মোহনবাগান ক্লাবের জেনারেল মিটিং চলার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় জীবিত ছিলেন প্রাক্তন সচিব অঞ্জন মিত্র। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আড়াআড়ি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদিকে টুটু বসু অন্যদিকে অঞ্জন মিত্র। সেই মিটিংয়ে প্রকাশ্য মঞ্চেই প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ঝামেলা বাধে। দু’জনই মাইক নিয়ে মঞ্চে বক্তৃতা দেন। ক্ষোভ উগরে দেন একে অপরের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। খেলার মাঠের সেই দড়ি টানাটানি কি রাজনীতিতেও? উঠছে তেমনই প্রশ্ন।