বুধবার দুর্গাপুরে ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ধানসিড়ি’ নামে সেই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। তিন বছরের মধ্যে সেই কারখানায় কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে। শিলান্যাসের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, আপাতত তাঁর লক্ষ্য রাজ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ‘এখন আমার ডেস্টিনেশন শিল্প।’ এরপরই একের পর এক প্রকল্পের তালিকা তুলে ধরেন তিনি। সব ঘোষণা শেষে জানান, এ দিন যা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন তিনি তা প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার। এ ছাড়া এই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৪-৫ লক্ষ মানুষ চাকরি পাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি ‘দেউচা-পাতমি’:
১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মমতা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তিনি জানিয়ছেন, দেউচা-পাতমিতে তৈরি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি। সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আগামী ১০০ বছরে বাংলায় বিদ্যুতের কোনও অভাব হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর দাবি, এই প্রকল্প সফল হলে বাংলায় বিদ্যুতের দামও কমে যাবে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জমি ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে আছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, অন্য শিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পেতেও আর কোনও অসুবিধা হবে না। এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল। সব পরিকল্পনা তৈরি।
তাজপুর বন্দর:
অনেক দিন ধরেই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা চলছে। দ্রুত তা বাস্তবায়িত হবে বলে জানান মমতা। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে। তবে এ বার আর বেশি দেরি নেই।
ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর:
ডানকুনি থেকে রঘুনাথ পর্যন্ত এলাকা যুক্ত হবে অমৃতসরের সঙ্গে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান।
জঙ্গলমহল সুন্দরী:
৭২ হাজার কোটির প্রকল্প। লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলবে। মমতা ঘোষণা করলেন, রঘুনাথপুরে যে শিল্পতালুক হবে, তার নামকরণ করা হয়েছে জঙ্গলমহল সুন্দরী। ইতিমধ্যেই জমি নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
পানাগড়ে সাড়ে ৮ হাজার কোটির প্রকল্প:
পানাগড় শিল্পতালুকে ৮৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ২৫ হাজার চাকরির সুযোগ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্গাপুর-জামুড়িয়া-হাওড়া-জামালপুরে নয়া প্রকল্প:
সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই প্রকল্পে।
এই সব প্রকল্পগুলি ঘোষণা করার পাশাপাশি শিল্প সংক্রান্ত দুটি নতুন পলিসির কথাও ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পলিসি-১- ইথানল প্রোডাকশন:
পরিবেশ বান্ধব ইথানল তৈরি করার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ভাঙা চাল থেকে এই ইথানল তৈরি হয়। সুতরাং এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন শিল্প তৈরি হবে, অন্যদিকে কৃষকদের চাল কেনা হলে তাঁরাও উপকৃত হবেন বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর ফলে অন্তত ৮ হাজার মানুষ চাকরি পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পলিসি-২- ডেটা সেন্টার:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এখন অনেকটাই এগিয়ে বাংলা। বহু সংস্থা বাংলাকে তাদের গন্তব্য বলে মনে করছে বলে দাবি করেন তিনি। এই সেক্টরের কথা মাথায় রেখেই ডেটা সেন্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৪০০ ডেটা সেন্টার তৈরি হবে। এখান থেকে কেবল পূর্ব ভারতই নয় প্রতিবেশি বাংলাদেশও ব্যবহার করতে পারবে। আইটি প্রশিক্ষিত ২৪ হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আরও পড়ুন: ৪০০ কোটির প্রকল্প, কয়েক’শ কর্মসংস্থানের সুযোগ, দুর্গাপুরে কারখানার শিলান্যাস করলেন মমতা