কলকাতা: সামনেই পুজো। বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব। আকাশে পেজা তুলোর মতো মেঘ। কাশফুলের গন্ধ। নতুন জামাকাপড়। কিন্তু রাজ্যের আট জেলা এখন বন্যায় বিপর্যস্ত (Flood Affected)। ডিভিসি (DVC) আর ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) জোড়া ফলায় বিদ্ধ দক্ষিণবঙ্গের অর্ধেক এলাকা। সেখানকার মানুষদের কাছে এখন নতুন জামাকাপড় বা দুর্গাপুজোর আনন্দ ‘বিলাসিতা’ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁদের বাড়ি অর্ধেক জলের তলায়। ঘরের আসবাবপত্র থেকে সবকিছু নষ্ট হওয়ার পথে। সেই নিয়েই এখন রাতের ঘুম উড়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamata Banerjee) কথাতেও সেই দুর্গত মানুষদের দুর্দশার কথা উঠে এসেছে।
আজ দক্ষিণবঙ্গের বন্যা কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতা। হেলিকপ্টারে করে সেখানকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। চারিদিকে জল আর জল। আজ সেই পরিস্থিতি ঘুরে দেখে আসার পর নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মমতা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শীর্ষ আমলারা। পুজোর আগে জেলার পর জেলা এই ভাবে বানভাসি হওয়ায়, সাধারণ মানুষের দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘পুজোর সময় লোকে আনন্দ করবে, নাকি গরু-ছাগল নিয়ে চিন্তা করবে। প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন করব, বার বার যেন বাংলা বঞ্চিত না হয়। ডিভিসির ব্যাপারে কেন্দ্র ব্যবস্থা নিক। উৎসবের সময় বাংলার মানুষ দুঃখে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনেক চিঠি লিখেছি। এর দায় ডিভিসিকে নিতে হবে। আমি নিজে চিঠি লিখব প্রধানমন্ত্রীকে। একটা রাজ্যকে কতবার ভাসাবে।’
শুক্রবারই এই বন্যা পরিস্থিতিকে ম্যান মেড বলে আখ্যা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই ডিভিসি ইচ্ছামতো জল ছাড়তে শুরু করে। তার জেরে প্লাবিত হয় বাংলা। রাজ্যকে কিছু না জানিয়ে মাঝ রাতে ডিভিসি জল ছেড়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এই জল ছাড়ার কারণে আসানসোল ডুবেছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতেও একই অবস্থা। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে আমাদের ভুগতে হয়, বিহারে বৃষ্টি হলে আমাদের ভুগতে হয়। আমি বার বার প্রতিবাদ করছি। তবু ডিভিসি ওদের কাজ করে যাচ্ছে।”
৩০ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ভবানীপুরে ভোটের দিন থেকে শুরু করে পরপর লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আর তাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়ার বিস্তীর্ণ অংশ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৩০ তারিখে প্রথমে ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ১ ঘণ্টার মধ্যে আবার ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মধ্যরাতেও জল ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ১ অক্টোবর প্রথমে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক ও পরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে বলে জানান মমতা। সবটাই রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে হয়েছে বলেই অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মমতার দাবি, রাজ্যের তরফে ডিভিসির কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হতে পারে। ড্রেজিং করে অন্তত আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল আটকানো সম্ভব বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন : CM Mamata Banerjee: আকাশপথে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পরই নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মমতা