কলকাতা: দিল্লির শাসক ক্ষমতা সংক্রান্ত বিলের (Delhi Amendment Bill) বিরুদ্ধে সমস্ত অ-বিজেপি নেতাদের একত্রিত হওয়ার ডাক দিয়ে চিঠি লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
তৃণমূলের লেটার প্যাডে লেখা সেই চিঠিতে মমতা ‘অ্যাড্রেস’ করেছেন সোনিয়া গান্ধী, শরদ পাওয়ার, এম কে স্ট্যালিন, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরিবাল, নবীন পট্টনায়ক, জগন রেড্ডি, কেএস রেড্ডি, ফারুখ আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি, দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে। বাংলার ভোট আবহে আচমকাই মমতার লেখা এই চিঠির প্রত্যেকটি লাইনের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চিঠিতে মূলত সাতটি বিষয়ের ওপরেই জোর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার্থে, বিজেপিকে রুখতে অ-বিজেপি শক্তিগুলিকে একত্রিত হওয়ার বার্তা চিঠিতে বারবার দিয়েছেন তিনি।
চিঠির শুরুতেই মমতা দিল্লি বিলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। নির্বাচিত সরকারের তুলনায় দিল্লির লেফট্যানেন্ট রাজ্যপালের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়ার বিতর্কিত বিলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।
এই বিলকে ইতিমধ্যেই অসাংবিধানিক অ্যাখ্যা দিয়েছেন বিরোধীরা। আম আদমি পার্টির অভিযোগ নির্বাচিত সরকারকে এড়িয়ে দিল্লির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে আরও বেশি করে নেওয়ার জন্যই কেন্দ্রের এই ‘অসাংবিধানিক’ বিল। ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দমন’ করা এই বিলের অন্যতম উদ্দেশ্য বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। সেই বিতর্ককেই এই চিঠিতে আরও বেশি উস্কে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “বিজেপি দেশের সমস্ত অ-বিজেপি দলগুলির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে। রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতাকে হ্রাস করতে ও স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইছে। রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতা হ্রাস করে কেবল পৌরসভার সমতুল্য করে তুলতে চাইছে। এক কথায়, বিজেপি ভারতে এক দলীয় স্বৈরাচারি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।”
দেশের সকল অ-বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি লেখেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সংবিধানের ওপর বিজেপি যে আঘাত হানছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।” চিঠিতে আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করেন মমতা।
মমতা চিঠিতে উল্লেখ করেন, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রত্যেক রাজ্যের রাজ্যপালকেই বিজেপি অফিসের ‘বেয়ারা’র মতো ব্যবহার করছে। নির্বাচন আসলেই সিবিআই, ইডির ভয় দেখানো হয়। সিবিআই, ইডি কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যগুলির সঙ্গে বঞ্চনারও অভিযোগ তোলেন। যেভাবে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি বিভিন্ন নীতিগতভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্যগুলির মতামতকে কেন্দ্র গুরুত্ব দেয় না বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।অ-বিজেপি ১২টি দলের প্রতিনিধিকে লেখা চিঠিতে এই প্রত্যেকটি বিষয় উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের আবহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই চিঠি দেশীয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অন্য মাত্রা যোগ করল।