কলকাতা : কারও কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা, আবার কারও বিরুদ্ধে সরাসরি চাকরি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তবে তাঁদের একটাই বক্তব্য, তাঁরা নির্দোষ। তাঁদের ফাঁসানো হচ্ছে। কেন মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না? আর কতদিন আটকে রাখা হবে? মঙ্গলবারের শুনানিতে কাতর প্রশ্ন তিন অভিযুক্তের। এদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) করা মামলার শুনানি ছিল। আদালতে সশরীরে হাজিরা দেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। আর জেল থেকে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী এদিন আদালতে জানান, গ্রেফতারের আগে থেকে নানাবিধ রোগে ভুগছেন তাঁর মক্কেল। ইডি-র আইজীবী জবাবে স্পষ্ট বলেন, ‘মেডিক্যালের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এইমসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। ফিট বলেছে।’ পার্থর আইনজীবী দাবি করেন, এইমসের তরফে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করতে বলা হয়েছিল। একথা শুনে বিচারক বলেন, ‘জেলের ভিতরে তেমন পরিকাঠামো আছে কি? ওঁর যদি তেমন অসুবিধা হয় তখন নিশ্চই দেখা হবে।’
পরে জেল থেকে পার্থ বিচারককে বলেন, ‘আমার পা ফুলে যাচ্ছে। এখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। আমার শরীর দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। এখানকার পরিস্থিতি দেখে যান। এখানে এত বন্দি আছে। আমার পা ফুলে ঢোল। যদি মরেই যাই তাহলে আর কি বিচার। যে যার মতো মিডিয়া ট্রায়াল করে যাচ্ছে। তদন্তের নামে ৮ মাস হল। আর কমাস রাখবে? ভাল থাকবেন স্যার।’
মানিক ভট্টাচার্যের দাবি, বিচার সবার জন্য হোক। অজ্ঞাতপরিচয় কারও চিঠির ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেছেন মানিক। তিনি বিচারককে বলেন, ‘প্রত্যেকদিন আমি কোর্টে আসি, আরও একটি দিন আসার জন্য। আইন কি শুধু সিনেমাতেই হয়? এই পরিস্থিতিতে কোর্ট কি করে একটি সিদ্ধান্তে উপনিত হচ্ছে? আমার বিরুদ্ধে যদি একটি নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে আমার জামিন বাতিল হোক। নাহলে জামিন দেওয়া হোক। এমন একটা অর্ডার দিন যাতে আমি ঘুমিয়ে পড়তে পারি আর যেন না ঘুম ভাঙে।’
মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত জানান, ইডি প্রত্যেকদিন বলে জেলে গিয়ে জেরা করতে চায়। কিন্তু গ্রেফতারের পর থেকে খুব বেশি দিন জেলে গিয়ে জেরা করেনি ইডি। শুধুমাত্র তাপস মণ্ডলের বয়ানের ভিত্তিতে কেন অভিযোগ আনা হচ্ছে, তাও জানতে চান আইনজীবী।
অর্পিতাও এদিন ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন। জেল থেকে তিনি বলেন, ৪ মাস একজন নির্দোষ মহিলা জেলের মধ্যে আছে। আপনার কি মনে হয় না তার সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে?
বিচারক প্রশ্ন করেন ‘আপনি জামিনের আবেদন করেছেন না কেন?’
অর্পিতা আরও বলেন, ‘আমি একটি উচ্চবংশের মেয়ে। আমার মা বয়স্ক। তার পাশে থাকা প্রয়োজন।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি উকিলবাবুর সঙ্গে কথা বলুন। আবেদন করলে নিশ্চই ভেবে দেখা হবে।’
জেলে পার্থ-অর্পিতা প্রায় ৮ মাস কাটিয়ে ফেলেছেন, মানিক আর একটু কম সময়। তবে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে যেভাবে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে, তাতে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা হয়ত দেখছেন না কেউই, তাই কি এমন আর্জি?