কলকাতা : একজন বাবার উচিত তাঁর সন্তানকে রক্ষা করা, অথচ ওঁর জন্যই আজ ওঁর স্ত্রী, সন্তান জেলে রয়েছেন। এই ভাষায় সওয়াল করেই মঙ্গলবার মানিক ভট্টাচার্যের (Manik Bhattacharya) জামিনের বিরোধিতা করলেন ইডি-র আইনজীবী। একইসঙ্গে মানিককে প্রভাবশালী তকমাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এদিন আদালতে পেশ করা হয়েছিল প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য, তাঁর স্ত্রী শতরূপা ও ছেলে সৌভিককেও। বিচার ভবনের বিশেষ ইডি আদালতে শুনানি চলাকালীন এদিন কিছু বলার আর্জি জানান মানিক, কিন্তু তাঁকে কার্যত ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন বিচারক। প্রয়োজন হলে হাইকোর্টে যেতে পারেন, এমনটাও বলেছেন বিচারক।
মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী এদিন বলেন, ‘আমার মক্কেল কিছু বলতে চান।’
বিচারক শুভেন্দু সাহা বলেন, ‘আমরা সবাই আইনের ছাত্র। শুনেছি উনি ল’ কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। উনি নিশ্চয় জানেন একবার আইনজীবী নিয়োগ করলে আর আদালতে নিজে বলা যায় না। কোর্টের ডেকোরাম তো ওঁর জানা উচিত।’
এরপর মানিক ভট্টাচার্য সংবিধানের আর্টিকল ২১-এর কথা বলতেই বিচারক বলেন, ‘হাইকোর্টে চলে যান। আমি কি আপনাকে কিছু বলার অনুমতি দিয়েছি?‘
বিচারক মানিকের আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনার ল’ কলেজের প্রিন্সিপালকে বলে দিন আর্টিকল ২১-এর জন্য হাইকোর্টে যেতে।’
আদালতে মানিককে ‘পাওয়ার কোরাপ্ট’ বলে উল্লেখ করে ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী বলেন, ‘উনি একজন রাজনৈতিক দলের নেতা। রাজনৈতিক ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাব) আছে। এতটাই প্রভাবশালী যে এখনও পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়নি।’
ইডি আরও জানিয়েছে মানিকের একজন ভাই আছেন, হীরালাল ভট্টাচার্য। তাঁর নামে থারা অনেক অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে। ইডি-র দাবি তিনি নাকি উত্তরে বলেছেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য আমি মানিক ভট্টাচার্যের দাদা।’ জোর করে তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছে ইডি। আইনজীবী আরও বলেন, ‘একজন বাবার উচিত তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে রক্ষা করা। ওঁর জন্য আজ ওঁর স্ত্রী ও ছেলে জেলে রয়েছেন। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করছি।’
মানিকের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্যর আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় এদিন উল্লেখ করেন, একটি সমন পাঠানো হয়েছিল। সমন জারি হওয়ার পর সুযোগ ছিল সশরীরে হাজির হওয়ার কিংবা কোনও প্রতিনিধিকে হাজির করানোর। শতরূপা এই মামলায় একজন অভিযুক্ত নন। ৩০ দিন ধরে জেল হেফাজতে রয়েছেন তিনি, অথচ আইনজীবীর দাবি, নিয়ম মাফিক একদিনও জেল হেফাজতে থাকার কথা নয় তাঁর। এই বলে জামিনের আবেদন জানান তিনি।
ইডি-র দাবি, শতরূপা এই দুর্নীতির টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বিদেশ যাওয়া-আসার খরচের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নাম রয়েছে একজন মৃত মানুষের। মানিকের ছেলে সৌভিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী দাবি করেন, একমাস জেল হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও তাঁর মক্কেলকে একদিনের জন্যেও জেলে গিয়ে জেরা হয়নি। তদন্তে সৌভিক সবসময় সহযোগিতা করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
মানিকের মামলার শুনানিতে ইডি উল্লেখ করে, এই দুর্নীতি এখন শুধু এসএসসি-তে সীমাবদ্ধ নয়। অয়ন শীলকে গ্রেফতার করার কথাও উল্লেখ করেছে তারা। অভিযোগের গভীরভাবে বিচার করা দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে মানিকের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, এই মামলায় উদ্ধার হওয়া টাকার সঙ্গে মানিকবাবুর কোনও সম্পর্ক নেই।