কলকাতা : রাতভর নাগাড়ে বৃষ্টি। শহরের একাধিক জায়গা সকাল থেকে জলমগ্ন। চারিদিক জল থইথই। শহরের বিভিন্ন জায়গায় যখন জলছবির এই করুণ ছবি ভেসে উঠছে, তার মধ্যেই রবীন্দ্র সরোবর লেকে ভেসে উঠছে শ’য়ে শ’য়ে মাছ। অনেক মাছ মরে গিয়ে জলে ভাসছে। কিছু মাছ আবার রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে পড়ে রয়েছে।
রবীন্দ্র সরোবরের গার্ড রেলিং বরাবর পাড় দিয়ে একের পর এক মরা মাছের সারি। কিন্তু কেন হঠাৎ এত মাছ রাতারাতি মরে গেল? কেএমডিএ-র আধিকারিকপা বলছেন, সাধারণত একটু অতিবৃষ্টি হলে এই ধরনের ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। রবীন্দ্র সরোবরের জলের বাস্তুতন্ত্র আরও উন্নত করতে বেশ কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জলের মধ্যে যাতে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে, তা নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রবীন্দ্র সরোবর লেকের মধ্যে সৌন্দর্যায়নের জন্য যে ফোয়ারাটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি নিয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের ।
জল দূষণ হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেএমডিএ। রবীন্দ্র সরোবরের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
কিন্তু এখানে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। আধিকারিকরা বলছেন, অতিবৃষ্টি হলে মাছের এমন মৃত্যু হতে পারে। তবে, সত্যিই কি অতিবৃষ্টির কারণেই এই এতগুলি মাছের মৃত্যু? নাকি এর পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন এলাকায় যে দোকান বা হোটেলগুলি রয়েছে, কিংবা অন্য যে কনস্ট্রাকশন রয়েছে, সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে দূষিত জল এসে মিশছে লেকের জলে। আর সেই কারণেই আরও বেশি পরিমাণে লেকের মাছ মারা গিয়েছে। মূলত রবীন্দ্র সরোবর জল দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। রবীন্দ্র সরোবর লেকের জল কালো হয়ে যাওয়ার পিছনেও এই একই কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
এর আগেও একাধিকবার রবীন্দ্র সরোবরের জলের দূষিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মাঝে অভিযোগ শোনা গিয়েছিল, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এখানে রবীন্দ্র সরোবরের জলে কাপড় কাঁচা হচ্ছিল। ফুল, প্লাস্টিক সব অবাধে ফেলা হচ্ছিল। আর তার ফলও দেখা গিয়েছিল। তখনও এভাবেই মাছের মড়ক দেখা গিয়েছিল রবীন্দ্র সরোবরে। শ’য়ে শ’য়ে মাছ ভেসে উঠেছিল রবীন্দ্র সরোবরের জলে। আর এবারও তাই হল। কেএমডিএ-র আধিকারিকরা যতই অতিবৃষ্টির কারণেই এমনটা হয়েছে, কিন্তু তারপরেও রবীন্দ্র সরোবরের জলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : Rain Update: দুর্যোগের বলি ১৪, ত্রাণশিবিরে ৮০ হাজার, জলের ঘেরাটোপে বন্দি ১৩ লক্ষ বঙ্গবাসী!