সুমন মহাপাত্র: ৬০০ দিনের এই আন্দোলন বারবার সম্পর্ক ভেঙেছে। আন্দোলনে আসতে গিয়ে বারবার বহু আন্দোলনকারী তাঁদের আত্মীয় পরিজন হারিয়েছেন। কিন্তু এই আন্দোলনে ব্যতিক্রমী ছবিও রয়েছে। খুকুমণি আর মিঠুনের গল্প যেন গুমোট পরিবেশে দমকা হাওয়া। মেদিনীপুরের খুকুমণি আর নদিয়ার মিঠুন আন্দোলনে এসে বৈবাহিক সম্পর্কে বেঁধেছে নিজেদের। ঠিক যেন কবীর সুমনের গান, “আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কি?” ৬০০ দিনের আন্দোলন, আর সেই আন্দোলনই জুড়ে দিয়েছে এই দু’জনের জীবন।
২০১৬ সালে এসএলএসটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তারপর মেরিট লিস্ট প্রকাশ। আর সেখান থেকেই আন্দোলনের শুরুয়াৎ। ২০১৯ সালে মেধা তালিকায় ওয়েটিং লিস্টে হঠাৎ প্রথমে নাম চলে আসে প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। অস্বচ্ছতার অভিযোগ আগে থেকেই ছিল, অঙ্কিতা অধিকারীর মেয়ের নাম যেন সেই আগুনে ঘি ঢালল। এরপর থেকে প্রেস ক্লাবে অনশন শুরু করেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। সেই অনশনে মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাসে কাজ হয়নি। ফলস্বরূপ বারবার রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা। এইরকমই একদিন রাস্তায় দেখা হয় খুকুমণি আর মিঠুনের। সেই রাস্তা থেকে একসঙ্গে লড়াই করতে করতে এখন একসঙ্গে বাসা বেঁধেছেন তাঁরা। ২০২০ সালের শেষের দিকে আন্দোলনের আলাপ বিয়েতে পরিণত হয় ২০২২ সালের অগস্ট মাসে।
বারবার বাধা এসেছে। ভালবাসার কথা বাড়িতে জানাতেই খুকুমণিকে শুনতে হয়েছে, কেন একজন বেকারকে বিয়ে করবেন তিনি? সেই একই প্রশ্নে খুকুমণির জবাব, “বয়স বেড়ে যাচ্ছে। বেকারত্বের জ্বালার মধ্যে একে অপরকে আঁকড়ে আমরা বেঁচে থাকব।” কিন্তু সত্যিই কি বেকার জীবন নিয়ে এভাবে সংসার চালানো যায়? তাই বিকল্প পথ খুঁজেছেন মিঠুন। ‘হবু শিক্ষক’ মিঠুন এখন মাঠে কাজ করে। চাষ করে যা সামান্য রোজগার করে, সেখান থেকেই কোনওক্রমে বেঁচে আছেন তাঁরা।
কিন্তু এত কষ্টের মধ্যেও আন্দোলন থেকে সরতে তাঁরা নারাজ। মিঠুন বলছেন, “যখন লকডাউন ছিল, তখনও লাগাতার ধর্নামঞ্চে এসেছে খুকুমণি। মেয়ে হয়েও লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। আমার আন্দোলনের শক্তি খুকুমণি।” আন্দোলন ৬০০ দিনে পৌঁছেছে। খুকুমণি আর মিঠুনের বিয়ের বয়স ৩ মাস। একসঙ্গে তাঁরা আজও আন্দোলনে আসে, পোস্টার ধরে, স্লোগান তোলে। আর বলে, “চাকরিটা আমাদের বড্ড প্রয়োজন।” আন্দোলন আন্দোলনের মতো চলবে। সরকার সরকারের কাজ করবে, বিরোধিরা বিরোধিতা করবে। কিন্তু কোথাও এই আন্দোলনের মাইল ফলক হয়ে থেকে যাবে খুকুমণি আর মিঠুনের এই গল্প, এমনটাই মনে করেন বাকি ‘সহযোদ্ধারা।’