কলকাতা: প্রথমত, বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হতে গেলে কি কোনও রাজনৈতিক দলের ছাড়পত্র লাগে? দ্বিতীয়ত, পিএসি চেয়ারম্যান কি বিরোধী দল থেকেই নিযুক্ত হন? মুকুল রায়ের পিএসি চেয়ারম্যান পদ বাতিলের দাবিতে জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন সরকার এবং আবেদনকারী আইনজীবীর কাছে এই দু’টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল।
বিধানসভার অন্দরে মুকুল রায় কখনও নিজেকে বিজেপি বিধায়ক হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছেন। তাঁর দল কোনটা জানতে চাইলে আবার বলছেন মনে-প্রাণে তৃণমূল করেন। এই অবস্থায় তৃণমূল-বনাম বিজেপির মধ্যে দীর্ঘ দড়ি টানাটানি চলছে। তার আগেই অবশ্য বিজেপি বিধায়ক হিসেবে মুকুলের মনোনয়ন জমা পড়ে। শেষে পিএসি চেয়ারম্যান হন তিনি। কিন্তু বিজেপি তো মুকুলের মনোনয়ন জমাই দেয়নি। উপরন্তু, প্রথা অনুযায়ী বিধানসভায় বিরোধী দল থেকেই পিএসি চেয়ারম্যান বাছা হয়। মুকুল এখন তৃণমূলে। বিজেপির তরফে এই দাবি তুলেই তাঁর চেয়ারম্যান পদ বাতিলের দাবি জানিয়ে মামলা করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে তৃণমূল ও মুকুল রায় উভয়ের বক্তব্য, কাগজে-কলমে কৃষ্ণনগরের বিধায়ক এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন। তাই তাঁকে পিএসি চেয়ারম্যান করায় কোনও দোষ নেই। বিজেপির পালটা যুক্তি, যিনি সর্বসমক্ষে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তিনি কী ভাবে বিজেপির বিধায়ক হতে পারেন? যে কারণে মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করার জন্যও স্পিকারকে আবেদন জানিয়েছিলেন শুভেন্দুরা। বর্তমানে বিধানসভায় সেই মামলার শুনানি চলছে। অন্যদিকে, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মুকুলে বিধায়ক পদ বাতিল করতে হাইকোর্টে মামলাও করা হয়েছে। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই এই দুই প্রশ্ন করতে শোনা যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে।
এই মামলা দায়ের হওয়ার পরই মুকুলের বক্তব্য জানতে তাঁর হলফনামা তলব করেছিল আদালত। কী ভাবে তিনি পিএসি চেয়ারম্যান হলেন, সেই জবাব দিয়ে হলফনামাও মুকুল জমা দিয়েছেন বলে খবর। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ দিন আরও জানতে চান, মনোনয়ন পত্রে কোনও ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় জানানো কি বাঞ্ছনীয়? অন্যদিকে মামলকারী বিজেপি বিধায়কের আইনজীবীর দাবি, “মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের কথা এখনও অস্বীকার করেননি।”
তবে আইনজীবী মহলের মতে, গোটা মামলাটি কার্যত বিধানসভার স্পিকারের এক্তিয়ারের উপরও দাঁড়িয়ে। বিগত কয়েক দশক ধরে যেভাবে বিরোধী শিবির থেকেই কোনও ব্যক্তিকে পিএসি চেয়ারম্যান বেছে নেওয়া হয়ে এসেছে, স্পিকার কি সেই প্রথা ভেঙে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যদিও প্রত্যাশিতভাবেই স্পিকারের পালটা যুক্তি হতে পারে, মুকুল এখনও কাগজে কলমে বিধায়ক। তবে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকারের ঘরে করা মামলা এবং মুকুলের তৃণমূলে যোগদানের ফুটেজ এ ক্ষেত্রে পালটা প্রমাণ হতে পারে বিজেপির। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। আরও পড়ুন: ‘এ রাজ্যে আমাদের কিছু হবে না’ বলতে বলতে বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেলেন পাঁচ শিক্ষিকা